অল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় নরসিংদীর কৃষকরা ঝুঁকছেন লটকন চাষে। লটকন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যও পেয়েছে অনেকে। এছাড়া এই লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এবছর সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে ভাল দাম পাবেন বলে আশা করছেন লটকন চাষীরা। এক সময়ের জংলী ফল লটকন এর কদর বেড়েছে। ঝোপ-ঝাড়ে গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরে থাকতো এ ফল। তবে সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা হয়ে গেছে। সুস্বাধু লটকন ঔষধিগুণ সম্পন্ন হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। জেলায় এবছর ১ হাজার ৮শত ২০ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল রংয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান, তাই এখানে লটকনের ভালো ফলন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয়েছে শিবপুর উপজেলায়। এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ লাভ বেশি হওয়ায় লটকন চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। জানা যায়, মানুষের শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর চাহিদা মেটায় এই লটকন। ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি-টু’, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। যা এই করোনাকালে আমাদের সবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নরসিংদীর লটকন অন্য যে কোনো জেলা থেকে মিষ্টি এবং রসালো হয়ে থাকে। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে ফলটির ফলন ভালো হয়। সেজন্য এ জেলার মানুষজন লটকনের বাণিজ্যিক চাষের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। লটকন চাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে শত কৃষকের। এ বিষয়ে মরজাল বাজারের লটকন ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানা যায়, নরসিংদী থেকে লটকন কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এই লটকন রফতানি করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, প্রকারভেদে পাইকারি মণ প্রতি দাম ওঠে ৩ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পলাশ উপজেলার বরাব গ্রামের লটকন চাষী দীপু দে বলেন, কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে অন্যতম ফল হলো লটকন। লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ ও সময় বেশি লাগলেও পরবর্তী সময়ে বিঘা প্রতি ১৪/১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। সে তুলনায় লাভ বেশি হয়। কখনও কখনও এত বেশি ফল আসে যে গাছের কান্ড ও ডাল পর্যন্ত দেখা যায় না। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৬ থেকে ৯ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের আব্দুল মোতালিব জানান, এবছর মোট ৫ বিঘা জমিতে লটকন চাষ করেছি। ভেবে ছিলাম ৩ লক্ষ টাকা লাভ হবে কিন্তু পরিচর্যার অভাবে ফলন কম হওয়ায় দেড় লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে। তবে লটকন ফল বিক্রি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না তেমন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকনের ফল ধরার পর জমিতেই পাইকারি বিক্রি করে দেওয়া যায়। পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন সংগ্রহ করেন। নরসিংদী কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: সাইদুর রহমান জানান, নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান, তাই এখানে লটকনের ভালো ফলন হয়। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬শত ১০ হেক্টর জমিতে লটনকনের বাগান করা হয়েছে। যা হেক্টর প্রতি ১৫ টন হারে ২৪ হাজার মেট্রিক টন লটকনের ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ। আর উৎপাদিত এ লটকন পাইকারি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মূল্য পাওয়া যাবে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা।