রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের দিন দুপুরে সরকারি রাস্তার দু’ধারে ১৩১টি ইউক্যালিপটাস গাছ কর্তন করা হলেও থানায় অজ্ঞাত মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার পুলিশ রমজান আলী নামে এক ব্যক্তিকে সন্দহে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। অজ্ঞাত মামলা হওয়ায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভিজ্ঞ মহল বলছেন, দিন দুপুরে গাছ কর্তন করা হলেও অজ্ঞাত মামলার প্রশ্ন উঠে না। মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের দাবি জানান। গত ২৪ জুন গঙ্গাচড়া মডেল থানায় মামলা করেছেন উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার নারায়ন চন্দ্র রায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মর্নেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি হতে কদমতলী রাস্তার দুই ধারে ২০০৫ সালে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করেন ওই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান সামসুল আলম। দীর্ঘ ১৬ বছরে গাছগুলো বেশ বড় হয়ে ওঠে। মর্নেয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান তার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল, রিয়াজুলসহ কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়ে সম্প্রতি গাছগুলো নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেটে আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় মর্নেয়ার বাসিন্দা বেলায়েত মিয়া গত ৫ মে রংপুর জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গঙ্গাচড়াসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানসহ মাহমুদুল ও রিয়াজুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঙ্গাচড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদারকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে তহশিলদার নারায়ন চন্দ্র মহন্ত তদন্ত করে চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানসহ মাহমুদুল ও রিয়াজুলের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তার ৩ শত ১১টি ইউক্যালিপটাস গাছ অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ার প্রতিবেদন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমির নিকট জমা দেন। যা তিনি সাংবাদিকদের নিকট নিজেই স্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করায ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মিয়া, আনারুলসহ অনেকে বলেন, তদন্তে গাছ কাটার প্রমাণ পাওয়ায় পরেও থানায় অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করাটা ঠিক হয়নি। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের নাম উল্লেখ করা উচিত ছিল। মর্নেয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী আজাদ বলেন, আমি গাছ গুলো কাটার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে রেজুলেশন করে অনুমতির জন্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ এনামুল কবির ও তাসলীমা বেগম এর নিকট আবেদন দিয়েছিলাম, যার রেকর্ড সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছে। কিন্তু আমাকে গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। বর্তমান চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে গাছ কাটার বিষয়ে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। অজ্ঞাত আসামী করে মামলার বিষয়ে তহশিলদার নারায়ন চন্দ্র বলেন, আপনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বুলবুল বলেন, মামলায় ১৩১ টি গাছ কাটা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে যারই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি রাস্তার গাছ কেটে বিক্রির কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন বলেন, অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।