প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি থেকে ১৬৯ জন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ডিগ্রী কলেজের। এ ঘটনায় ওই কলেজের উপবৃত্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় কলেজ পরিচালনা কমিটির সাথে অধ্যক্ষের দ্বন্দ্বকে দায়ি করছেন অভিভাবকরা। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, দারিদ্র-পিড়িত ও পিছিয়ে পড়া এলাকা বিবেচনায় সরকার কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলাকে শতভাগ উপবৃত্তির আওতাভুক্ত করে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের ১৬৯জন শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপবৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দেন। ২১এপ্রিলের আবেদনের শেষ তারিখ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির উপ-পরিচালকের এক চিঠিতে বলা হয়,‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট যে কোনো সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ি থাকবেন। সরেজমিন ও এলাকার সুধিজনের কাছে জানা যায়, যাদুরচর ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মজিবুর রহমান বঙ্গবাসি দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রী পাশ ছাড়া ডিগ্রী কলেজের কেউ সভাপতি হতে পারবেন না। ১৫ সালে যাদুরচর কলেজে ডিগ্রী খোলা হলে, তৎকালিন এমপি মো. রুহুল আমিন পদাধিকারে সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৭ সালে জানুয়ারিতে মজিবুর রহমান নকল ডিগ্রী পাশ সনদে সভাপতি নির্বাচিত হন। কলেজ অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম নকল সনদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ে সনদ যাচাইয়ের জন্য আবেদন করেন। বোর্ড তদন্তে তার সনদ জাল প্রমানিত হলে সভাপতি পদ বাতিল হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই নিয়ে অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠা সভাপতির দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করে এবং কলেজের শিক্ষার অবনতি ঘটে। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় গভর্নিং বডির অনুমোদন দেন। মো. আব্দুস সালাম মন্ডল সভাপতির দায়িত্ব পান। সভাপতি অনুমোদকৃত সদস্যদের নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ২১ সালে প্রথম সভা করার জন্য নোটিশ খাতায় ৫ জন সদসের স্বাক্ষর নেন। পরে সভা না করে গোপনে সভাপতি আব্দুস সালাম মন্ডল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মজিবুর রহমান বঙ্গবাসি, শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারি অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম,আনছার আলী প্রভাষক (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি), রফিকুল ইসলাম (প্রভাষক বাংলা) যোগসাজসে অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বহিস্কার করেন এবং সহকারি অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যেক্ষের দায়িত্ব দেন। এই নিয়ে চলে মামলা মোকদ্দমা। অভিভাবকরা মনে করেন এই দ্বন্দের কারণে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে ওই কলেজের ১৬৯ জন শিক্ষার্থী। ওই কলেজের ২০২১-২২ শিক্ষবর্ষের শিক্ষার্থী শফিক আহম্মেদ, আরিফুল ইসলাম,সামিউল ইসলামসহ অনেকে জানান, কলেজ কর্তৃক নিদের্শনা অনুযায়ি নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র কলেজের অফিস কক্ষে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীও উপবৃত্তির টাকা পায়নি। যাদের চক্রান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচারসহ উপবৃত্তির আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকা পাঠাতে অফিস সহকারী মোস্তাফা কামাল ও মাসুদ পারভেজকে লিখিত নির্দেশনা দিলেও তারা তা মানেননি। এ কারণে ১৬৯জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় অফিস সহকারী মোস্তফা কামাল ও মাসুদ পারভেজকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে ২০২১সালের ১১ অক্টোবর কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী মিলে আমাকে অবৈধভাবে সাময়িক বহিষ্কার করে ওই কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন এবং আমার অফিস কক্ষসহ একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। ওই দিনই বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, অভিযোগের আলোকে গত ১২অক্টোবর রৌমারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একাডেমিক সুপার ভাইজার সরেজমিন গিয়ে কলেজের একাডেমিক ভবনের তালা খুলে দেন। অধ্যক্ষের (রফিকুল ইসলাম) আদেশ পাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকা পাঠাতে না পারার কথা স্বীকার করে যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘উপবৃত্তির তালিকা তৈরির শুরুতে এ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম তাদের এ কাজে বাঁধা দেন। তিনি বলেন, ‘ছোট চাকুরী করি। চাকুরী হারানোর ভয়ে ওই সময় তালিকার কাজ করা থেকে বিরত থাকি। তবে আরেক অফিস সহকারী মাসুদ পারভেজ বলেন,‘আমরা উপবৃত্তির জন্য শুধু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। তার দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ কখনো তাদের দিয়ে অনলাইন বা কম্পিউটারের কাজ করান না। তবে অফিস সহকারীদের হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে সহকারী অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালত থেকে রায় পাওয়ার বিষয়টি অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের ২০ মার্চ ২২ তারিখে চিঠি পেয়ে আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরে আসি। কর্মচারীদের হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইবুল ইসলাম বলেন, এঘটনায় আমি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরেও তারা কাজ করেননি। শেষ দিন অনেক যোগাযোগ করেও তাদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অনলাইন করাতে পারিনি। এটা মুলতঃ কলেজ পরিচালনা কমিটির সাথে অধ্যক্ষের মামলা মোকদ্দমা ও ঠেলাঠেলির কারণে এঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, এঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।