পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন হামজা শেহবাজই। যদিও পার্লামেন্টে বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা মুখ্যমন্ত্রী পদে তার বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছিলেন। তবে ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি দশ পার্লামেন্ট সদস্যের ভোট বাতিল করে দেন। এতে করে হামজা শেহবাজের পক্ষে থাকা আইনপ্রনেতার সংখ্যা বেশি হয়ে যায় এবং তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকেন। এ খবর দিয়েছে ডন।
খবরে জানানো হয়েছে, শনিবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করেন হামজা শেহবাজ। তাকে শপথ পাঠ করান গভর্নর বালিঘুর রহমান। এসময় কালো শেরওয়ানি পরা ছিলেন হামজা। পাঞ্জাবের গভর্নর হাউজে এই শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তিনি শপথ নেয়ার পরই বাইরে স্লোগান শোনা যায়, ‘এক জারদারি, সাব সে ভারি’ অর্থাৎ, একজন জারদারির ওজন সবার ওজনের থেকে বেশি। নতুন করে দায়িত্ব নেয়ার পর হামজা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়া তাকে সাহায্য করায় আসিফ জারদারি এবং চৌধুরি সুজাত হুসাইনকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
তবে পার্লামেন্টের ভোটে প্রথমে পিছিয়েই ছিলেন হামজা। ৩৭১ সদস্যের পার্লামেন্টে ১৮৬ জনই হামজার প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই নেতা চৌধুরি পারভেজ এলাহিকে ভোট দিয়েছিলেন। অপরদিকে হামজা পেয়েছিলেন ১৭৯ ভোট। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দলের আইনপ্রনেতা যদি তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয় তাহলে তার ভোট বাতিল হয়ে যায়। সেই ধারা মাফিক পারভেজ এলাহির পক্ষে পড়া ১০ ভোট বাতিল হয়ে যায়। মূলত পিটিআই প্রার্থী করেছিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ কায়েদে আজমের (পিএমএল-কিউ) পারভেজ এলাহীকে । কিন্তু এই দলের প্রধান সুজাত হোসেন তার দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হামজাকে ভোট দিতে বলেছিলেন। সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে পিএমএল-কিউর পার্লামেন্টারি দলের ১০ সদস্য এলাহীকে ভোট দেন। সে কারণে পাঞ্জাব পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি এই দশজনের ভোট বাতিল করে দিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রার্থী হামজাকে জয়ী ঘোষণা করেন।
এদিকে এই পরাজয় মেনে নিতে না পেরে আদালতের দারস্ত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই। তাদের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্টারি দলের সিদ্ধান্তে অন্য কারও হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই ডেপুটি স্পিকার ওই ১০ সদস্যের ভোট বাতিল করতে পারেন না। ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শুক্রবার রাতেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা পড়েছে।
সম্প্রতি পাঞ্জাবে ২০টি আসনের উপনির্বাচনে ইমরানের দলই ১৫টি আসনে জেতে। চারটিতে জেতে পিএমএল-এনের প্রার্থীরা। পরে লাহোর হাইকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে পার্লামেন্টকে নির্দেশ দিলে তা মেনেই শুক্রবার ভোট হয়। যে ২০টি আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল, সেগুলোর সবগুলোই একসময় পিটিআইয়ের ঝুলিতে ছিল। মার্চে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের পাশাপাশি পাঞ্জাব পার্লামেন্টেও ইমরানের দলে ভাঙন ধরে। দলটির বিদ্রোহীরা পিএমএল-এনের সঙ্গে হাত মেলালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারান পিটিআই নেত উসমান বুঝদার। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন হামজা শেহবাজ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের ছেলে। সেসময় ইমরান ওই দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে গেলে কমিশন তাদের সদস্যপদ বাতিল করে ওই ২০ আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা দেন। আর তাতেই ইমরানের দল বড় জয় পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ ফেরত পাওয়া হলো না পিটিআই’র। এ নিয়ে নিজের সমর্থকদের প্রতিবাদ সমাবেশ করার ডাক দিয়েছেন ইমরান খান। তিনি দাবি করেন, তার বিরোধীরা রাজনৈতিক কূটকৌশল চালু করেছে। এর বিরুদ্ধে আদালতে লড়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। তার আহবানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ সেখানে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তারা এই নির্বাচনকে ‘চুরি’ বলে আখ্যায়িত করছে। করাচিতে বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসকে এক আন্দোলকারী শাজিয়া ইমরান বলেন, তারা ইমরান খানের ম্যান্ডেট চুরি করেছে। তারা পুরো জাতিকে ধোঁকা দিয়েছে। মানুষ এটি মানবে না। আমরা বহুদিন ধরে এসব দেখে আসছি।