মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গেছে সরকার: মির্জা ফখরুল

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২

লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিএনপির ৩ দিনের কর্মসূচি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সমস্যাকে জটিলতর করেছে। দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যই হচ্ছে চুরি এবং নিজস্ব দলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিজেদের দুর্নীতি ও অনৈতিক সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। শুধু লোভের কারণে আজ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গেছে সরকার।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ননীতিকে বিএনপি কীভাবে দেখে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) পরিকল্পনা আছে, পরিকল্পনা নেই যে, তা নয়। তাদের নীতিও আছে, নীতিও যে নেই, তা-ও নয়। তাদের নীতি একটাই, সেটা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং তা বিদেশে পাচার করা।’
বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ২৯, ৩০ ও ৩১ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা কালে তিনি এ কথা বলেন। কর্মসূচির মধ্যে ঢাকায় ২৯ জুলাই মহানগর উত্তর বিএনপি এবং ৩০ জুলাই দক্ষিণে বিক্ষোভ সমাবেশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গত সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি বিসর্জন দিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করার ফলে বর্তমানে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি আইন তৈরি করে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। এখন শহরে দু-তিন ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শিল্প ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ ধরনের অনেক নজির আছে বিভিন্ন দেশে। যারা এ ধরনের পরিকল্পনা করেই সম্পদ লুট করেছে, ভেরি রিসেন্টলি শ্রীলঙ্কায় সে ঘটনা ঘটেছে। জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে এসে জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা মূল নেতৃত্ব দিচ্ছিল (প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী), তারা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেখানে আবার সংবিধান অনুযায়ী নতুন নির্বাচন হয়েছে, নতুন নেতৃত্ব এসেছে।’ তিনি বলেন, একইভাবে নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলায়, আরও অনেকগুলো দেশ আছে—সরকারের উদ্দেশ্যই যদি হয় লুট করা এবং জনগণে সম্পদ লুট করা—তখন সেই অর্থনীতি কিন্তু টেকসই হয় না। দীর্ঘদিন উন্নয়ন করে টেকসই করে রাখা, সেই কাজটা হয় না। যে কারণে আয়বৈষম্য বাড়তে থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ এক শ্রেণির মানুষ অনেক বড় হয়ে গেছে, তাদের সম্পদের পাহাড় হয়েছে। আরেক শ্রেণি দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। একজন সাধারণ নি¤œ আয়ের মানুষ, তার পক্ষে জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটা সমাজে আস্তে আস্তে বাড়ছে এবং অতি দ্রুত এই অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৮ সালের চেয়ে ভালো নির্বাচন হবে, সিইসির এ বক্তব্যর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বহুবার বলেছি, এ বিষয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছা করে না। নির্বাচন–সম্পর্কিত কথা আমরা বলি না। কারণ, আমরা একটা জিনিস খুব পরিষ্কার করে জানি এবং জনগণ এটা বিশ্বাস করে, তারা অভিজ্ঞতা থেকে দেখছে যে বর্তমান সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে এবং দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’
বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দু-তিন বছরে বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান। বেশ কিছুসংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই তিন বছরে সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্চা প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রীয় দায়দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।
সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, শাকসবজি ও মাছ-মাংসের দাম ক্রমে বাড়তে থাকার বিষয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে এর দায় নিয়ে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালকের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের বিষয়ে আলোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশের সবাই অপরাধী—ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালকের এ মন্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের মহাপরিচালক নীরব থাকায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ অপরাধী হলেও তাঁর বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করা হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীরা অভিযুক্ত হওয়ায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীদের’ এ ধরনের ন্যক্কারজনক, অসামাজিক কার্যকলাপকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এ ঘটনাগুলো ঘটছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের ‘সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্যকলাপের’ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
সভায় মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী চার নেতা–কর্মীর মৃত্যুদ- কার্যকরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী মানুষকে মৃত্যুদ- দেওয়া এবং তা কার্যকর করা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com