যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, রাজধানীতে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের অফিস যাতায়াতে ভাড়া দুই হাজার ১০০ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তেলের দাম ও গাড়ি ভাড়া বাড়ানোর পর অফিসগামী যাত্রীদের ওপর গবেষণা করে এ তথ্য পাওয়া যায়। গতকাল বুধবার (১০ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো যেতো কি না’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যারা কর্মজীবী-শ্রমজীবী আছেন, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশের বেতনে যাতায়াত ভাড়া দেওয়া হয় না। আমরা বেশকিছু চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। যারা বেতন পান সর্বনি¤œ তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আমরা দুদিনে ২৮টি বাস কাউন্টারে পর্যবেক্ষণ করেছি। অফিসগামীদের প্রতিদিন যাতায়াতে বাসভাড়া সর্বনি¤œ ৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যার পরিমাণ দুই হাজার ১০০ থেকে ছয় হাজার। যার বেতন তিন হাজার ২০০ টাকা, তিনি দুই হাজার ১০০ টাকা ভাড়া দেবেন কীভাবে?
‘একজন চাকরিজীবীর সঙ্গে আমি কথা বললাম, যিনি বেতন পান ১০ হাজার টাকা। দোকানে চাকরি করেন। তার স্ত্রীও চাকরি করেন। ঢাকায় সাবলেট থাকতেন। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি গ্রামে চলে যাবেন। কারণ তার প্রতিদিন ৭০ টাকা গাড়ি ভাড়া ধরে মাসে দুই হাজার ১০০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। মাসে চারবার বাড়িতে যান এমন অনেক চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের চারবারের যাতায়াতে অনেকের এক হাজার আবার অনেকের চার হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে।’ রাজধানীর বাসভাড়া বাড়তি রাখা হচ্ছে জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বলেন, আমরা দুদিনে ২৮টি বাস কাউন্টারে পর্যবেক্ষণ করেছি। সরকার বাড়িয়েছে আড়াই টাকা। কিন্তু সিটিতে প্রতি কিলোতে ৩ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র তার মানুষকে সব ধরনের সুযোগ দেবে। কিন্তু রাষ্ট্রের অসহযোগিতার কারণে মানুষের ওপর যে চাপটা তৈরি হয়, যে অর্থনৈতিক ধাক্কাটা পান, তাদের ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা নেই। সরকার বাড়ালো জ্বালানি তেলের দাম। কিন্তু বেড়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া। আমি জানতে চাইলাম একজন সিএনজিচালকের কাছে ভাড়া কেন বাড়াচ্ছেন, তিনি বলেন- চালের দাম বাড়ছে। আমাদের তো বাড়াতেই হবে। একজন রিকশাওয়ালার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তিনি ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আগে আমার ৮০০ টাকা ইনকাম হলেও সংসার চালাতে পারতাম। এখন খরচ বেড়েছে। যেহেতু এসব বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এজন্য সরকারের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন মোজাম্মেল হক।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ডিন ড. ইজাজ হোসেন, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।
তেলের মূল্যবৃদ্ধি: কোন জেলার বাস ভাড়া কত
গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ৩৪ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। যা ওইদিন রাত ১২টার পর থেকেই কার্যকর হয়। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার (৮ আগস্ট) বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার দেবনাথ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন করে বাস ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী ডিজেলচালিত নন এসি বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে মোতাবেক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) থেকে প্রাপ্ত দূরত্ব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত সেতুর টোল বা ফেরি ভাড়ার তালিকা অনুসরণ করে যাত্রীপ্রতি ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। এক নজরে জেনে নেওয়া যাক ঢাকা থেকে বিভাগ অনুযায়ী দেশের বাকি ৬৩ জেলার যাত্রীপ্রতি নন এসি বাস ভাড়া:
ঢাকা বিভাগ: ফরিদপুর ৩৭২ টাকা, গাজীপুর ১১০ টাকা, নারায়ণগঞ্জ ৫৫ টাকা, গোপালগঞ্জ ৬৩৯ টাকা, রাজবাড়ি ৩৬৭ টাকা, কিশোরগঞ্জ ৩৯৩ টাকা, মাদারীপুর ৪০০ টাকা, মানিকগঞ্জ ১৪৫ টাকা, মুন্সিগঞ্জ ১২১ টাকা, শরিয়তপুর ২৯৪ টাকা, টাঙাইল ২৫২ টাকা, নরসিংদী ২৩৬ টাকা।
ময়মনসিংহ বিভাগ: ময়মনসিংহ ৩২৬ টাকা, জামালপুর ৪৮৫ টাকা, নেত্রকোনা ৪৩৭ টাকা, শেরপুর ৬৩৯ টাকা।
চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রাম ৬৯০ টাকা, কক্সবাজার ১১২৪ টাকা, রাঙামাটি ৮৭২ টাকা, বান্দরবন ৯০৩ টাকা, খাগড়াছড়ি ৭৮৫ টাকা, কুমিল্লা ২৯৭, বি.বাড়িয়া ২৯৪ টাকা, লক্ষ্মীপুর ৫০৮ টাকা, নোয়াখালী ৫৩৯ টাকা, ফেনী ৪৮২ টাকা, চাঁদপুর ৪৫৬ টাকা।
বরিশাল বিভাগ: বরিশাল ৭৫০ টাকা, পটুয়াখালী ৮৬৪ টাকা, ঝালকাঠি ৭৯৫ টাকা, পিরোজপুর ৮৬৭ টাকা, বরগুনা ৯৪৫ টাকা, ভোলা ৭৮৮ টাকা।
খুলনা বিভাগ: খুলনা ৮৩০ টাকা, বাগেরহাট ৯৩৭ টাকা, যশোর ৭১৫ টাকা, ঝিনাইদহ ৬০৬ টাকা, কুষ্টিয়া ৭১২ টাকা, মেহেরপুর ৭৬৬ টাকা, চুয়াডাঙ্গা ৬৭৩ টাকা, মাগুরা ৫০৩ টাকা, সাতক্ষীরা ৯৬৫ টাকা, নড়াইল ৭২৯ টাকা।
রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী ৭২৭ টাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৮৫৬ টাকা, বগুড়া ৫৭০ টাকা, নওগাঁ ৭১৬ টাকা, পাবনা ৬৬০ টাকা, জয়পুরহাট ৭২৭ টাকা, নাটোর ৬০৬ টাকা, সিরাজগঞ্জ ৩৭৯ টাকা।
রংপুর বিভাগ: রংপুর ৮৯৮ টাকা, লালমনিরহাট ১০১৬ টাকা, কুড়িগ্রাম ১০২৫ টাকা, গাইবান্ধা ৭৮৬ টাকা, দিনাজপুর ৯৬১ টাকা, ঠাকুরগাঁও ১১২০ টাকা, প গড় ১২২৪ টাকা, নীলফামারী ১০৩৯ টাকা।
সিলেট বিভাগ: সিলেট ৭২৮ টাকা, সুনামগঞ্জ ৮৭০ টাকা, হবিগঞ্জ ৪৭১ টাকা, মৌলভীবাজার ৫৭৪ টাকা।