ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে। বুধবার(১৭ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ৭টায় মির্জাপুর ইউনিয়নের খলিফা পাড়ার ১নং ওয়ার্ডের ওমদা মিয়া তালুকদারের বাড়ীর বাসিন্দা আবু মোরশেদ রায়হান ও নাহিদা দম্পতির পরিবার এ অভিযোগ করেন। এ নিয়ে ভুক্তভুগী পরিবার কর্তব্যরত চিকিৎসক সালাউদ্দিন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স শাকিলা আক্তার, খুরশিদা আক্তার, শাম্মী আক্তারকে দায়ী করছেন।তাদের দীর্ঘ অবহেলার কারনে এই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সোহানিয়া আক্তার বিল্লাহ জানান যদি ডেলিভারি রোগীকে কোন অবহেলা করে চিকিৎসা সেবা না দেয়ায় নবজাতকের মৃত্যু হয় তদন্ত করে তাদের বিরোদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী পরিাবার ডেলিভারি রুমের সামনে অবস্থান করে কান্নাকাটি করছে। এসময় প্রতিবেদককে নাহিদার শশুর বলেন, গতরাত দেড়টার দিকে আমার পুত্রবধুকে ডেলিভারীর জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে আমার মেয়ে। জরুরী বিভাগে গেলে সেখানের চিকিৎসকরা ২য় তলায় যেতে বলেন। রোগীকে নিয়ে গেলে সেখানের দায়িত্বরত নার্সরা নার্সিং হোমে ঘুমাচ্ছেন। বলেন আগে টুকেন নিয়ে আস, পরে একজন নার্স এসে ঔষধ লিখে দিল। তখন বলল বাচ্চা নরমেল হবে, অপেক্ষা কর। এর পর কোন ডাক্তার নার্স আসেনি একটু দেখতেও। রাত যখন ৩টা বাজে তখন রোগীর চিৎকারে হাসপাতাল কাঁপতেছে।কিন্তু ডাক্তার, নার্স তখন ঘুমাচ্ছে রুমে। যখন নার্সিং হোমে গেলাম বলল অপেক্ষা কর আসতেছি।জুনিয়র একজন নার্সকে বল দেখতে। এ বলেই প্রায় ২২মিনিট পর একজন নার্স এসে দেখে চলে যায়। ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে নার্স আবারো বলে বাচ্চা নরমাল হবে এখানে একটা সাক্ষর কর।জোর করে সাক্ষর নিয়ে ঘন্টা পরে বলে বাচ্চা ময়লা খেয়েছে যার কারনে সে গর্ভে থাকা অবস্থায় মারা গেছে। তাহলে ডাক্তার সেটা আগে বলেনি কেন? তারা সারারাত রুম বন্ধ করে ঘুমাবে,আর চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা এভাবেই মারা যাবে, নবজাতক বাচ্চাদের এভাবেই মৃত্যুর মুখে ফেলে দেবে। তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে আমার নাতিকে হারিয়েছি।আর তো তাকে ফিরে পাবনা, আমার মত কেউ এভাবেই পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার আগে যেন মারা না যায়, হাসপাতালে চিৎকার করতে না হয় স্বজন হারিয়ে, কর্তৃপক্ষ যেন নজর রাখে এবং কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সের যেন বিচার হয় এটাই দাবি আমাদের। অভিযুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স শাকিলা বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এখন আমি যেরকম বলি কোন কাজ হবেনা। কেননা বাচ্চা যখন মারা গেছে কি করতে পারি। রাতে তিনজন ডেলিভারী রোগী এসেছে। একজনকে সিজার করতে হবে বলে দ্রুত আলিফ হসপিটালে প্রেরন করেছি।এ পরিবার যখন রাতে আসে আমরা দেখেছি,নরমাল হবে বলেও জানিয়েছি।কিন্তু বাচ্চা ময়লা খেয়ে ফেলেছে ও বাচ্চার অর্ধেক মাথা বের হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় সকাল ৬টায় কোন হাসপাতালে পাঠাবো বা পাঠালে ঝুঁকি যদি রাস্তায় ডেলিভারি হয়ে যায়। তাই এখানেই রেখে ডেলিভারী করিয়েছি।কিন্তু বাচ্চার পেটে ময়লা প্রবেশ করায় নবজাতক মারা গেছে। রাতেও একটি নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি গত পরশু ৫জনকে নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি, কেন অবহেলা করব, রোগীদের সেবা দেয়ায় আমাদের কর্তব্য। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সোহানিয়া বিল্লাহ বলেন, একজন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। বাচ্চাটির পেটে ময়লা প্রবেশ করার কারনে ডেলিভারির আগেই মারা যায়, হ্যাঁ যদি নাইট ডিউটির কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্টাফ নার্সদের অবহেলার কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটে, তাহলে তদন্ত কমিটি করে সত্যতা পেলে তাদের বিরোদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ হাসপাতালে গত ১৬দিনে ১০৪জন ডেলীভারী রোগী এসেছে,তারমধ্যে ৮৪জন নরমাল ডেলিভারি হয়েছে, ১৪জনকে রেফার করেছি ও একজন ডেলীভারী রোগেকে সিজার করিয়েছি।