কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সূর্যালোক যেন নুয়ে পড়েছে, সূর্যের তাপের জ্বলসানিতে প্রানীকূল পেরেশান। অপরদিকে তীব্র তাপদাহে খরায় রোপা আমন ধানের জমি ফেটে চৌচির। ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা নেই। প্রখর রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে জমি। রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে রোপা আমন ধানের চারা। জমি চাষ, শ্রমিকের মজুরি, তেলের দাম বৃদ্ধি, সার ও কীটনাশকের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। ফলে ধান উৎপাদনে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে সে আশা এখন গুড়েবালি। খেতে আমনের চারা রোপনের পর এখন পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির হওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। ভাদ্র মাসের শুরুতেই চৈত্র মাসের মতো খরা। কাঠফাঁটা তপ্ত রোদে ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছে মানুষসহ প্রাণীকুল। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক সময়মত জমিতে রোপা আমন রোপন করতে পারছে না। দেরি করে রোপন করলেও বৃষ্টির অভাবে রোদে পুড়ে বিবর্ণ হয়েছে রোপা আমন ধানের চারাগুলো। ফেটে চৌচির হচ্ছে আবাদি জমি। শনিবার (২০ আগস্ট) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলের মাঠ ঘুরে রোপা আমন ধানের জমিতে দেখা যায়, রোপা আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে আছে। কোথাও বৃষ্টির ছিটেফোটা নেই। এ সময় রোপণকৃত জমি বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন থাকার কথা থাকলেও আবাদি জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। বৃষ্টির জন্য দিন গুনছেন তারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন কখন হবে বৃষ্টি। উপজেলার চরকাটি হারী, চরহাজিপুর, সাহেবের চর, পিতলগঞ্জ, আড়াইবাড়িয়াসহ একাধিক গ্রামের মাঠে এখন রোপা আমন ধানের জমি সবুজে ভরে গেছে। তবে, পানির অভাবে অধিকাংশ ধানক্ষেত ফেটে চৌচির। সদ্য রোপন করা ধানের চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গুটি কয়েকজন কৃষক শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি দিয়ে ধান রোপণ করছেন। কিন্তু জমিতে পানি দেওয়ার সাথে সাথেই আবার জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পানি দেয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় কৃষক। এতে তাদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। চরকাটি হারী গ্রামের আব্দুল বাতেন,সামিম, সাহেবের চর গ্রামের কৃষক আফাজ, সাদ্দাম, নিজামুদ্দিনসহ অনেকেই জানান, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক মোটর চালিয়ে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে তাদের বাড়তি খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ফসলের ক্ষেত ফেটে চৌচির হওয়ায় জমির ফসল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেকে জমিতে আমন ধান লাগাতে পারছেন না। আমনচাষে বিঘœ ঘটলে প্রান্তিক চাষিরা পড়বে লোকসানে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৩০০হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইমরুল কায়েস বলেন, এ চলতি মৌসুমে তুলনামূলক কম বৃষ্টি হওয়ায় তাপদাহ মোকাবেলা করে আমন চাষ করার বিষয়ে কৃষকদের সম্পূরক সেচের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।