দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শিল্পাঞ্চলে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। চা শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘট নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে গত রবিবার (২২ আগস্ট) এক সমঝোতা বেঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৯ টায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ৩টায়। টানা ৫ ঘণ্টার বৈঠকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া, শ্রম অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক নাহিদুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীর অর রশিদ তালুকদার, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাগণসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। শ্রমিক নেতাদের মধ্যে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালন্দি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আপাতত পূর্বের ১২০ টাকা মজুরি চলমান রেখে গতকাল সোমবার থেকে কাজে যোগদান করবেন।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্তভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেবেন এমন নিশ্চয়তার পর শ্রমিক নেতারা তাদের টানা ৯ দিনের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। বিবৃতিতে সাক্ষর করেন প্রশাসনের পক্ষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী প্রমুখ। সোমবার (২২ আগস্ট) সকালে দেশের চা শিল্পাঞ্চল পুনরায় যেখানে সরব হয়ে ওঠার কথা ছিল, সেখানে দেখা গেলো সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন ভ্যালি এবং চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটিসহ সাধারণ শ্রমিকেরা এই রাতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট অব্যাহত রাখার পক্ষে হাজারো চা শ্রমিক মিলে বিক্ষোভ করে। সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া, কালিঘাট, ভাড়াউড়া, সাতগাঁও চা বাগানসহ কোনো চা বাগানেই কাজে ফিরেননি চা শ্রমিকেরা। সোমবার সকাল ১১টা থেকে সাধারণ শ্রমিকেরা কালিঘাট ও ফুলছড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানে “চা শ্রমিকের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, রুটি-রুজির সংগ্রাম চলবেই চলবে, ৩০০ টাকা মুজুরি দিতে হবে, ধর্মঘট চলবেই চলবে”-এসব স্লোগান নিয়ে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সাধারণ শ্রমিকদের একটাই দাবি-দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দিতে হবে, নতুবা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের মুজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে। এদিকে সোমবার সকালে কালিঘাট চা বাগানে জেলা প্রশাসক কার্যালের কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের বিষয়টি সাধারণ চা শ্রমিকদের জানাতে গেলে চা শ্রমিকদের রোষানলে পড়ে মারধরের শিকার হন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ। এসময় সাধারণ চা শ্রমিকরা শ্রমিক নেতাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ‘দালাল’ বলে নানা ধরণের স্লোগান দেন। সাধারণ চা শ্রমিকেরা দৈনিক খবরপত্র-কে বলেন-চা শ্রমিক নেতারা দালাল। কারণ গত ২০ আগস্ট ১৪৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হলো কিন্তু আমরা প্রত্যাখান করি। এখন গভীর রাতে তারা ১২০ টাকা পূর্বের মজুরি মেনে নিয়ে তারা ফায়দা লুটতে চায়। তবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেয়ার আগ পর্যন্ত যদি ১৪৫ টাকার সিদ্ধান্তও করতেন শ্রমিক নেতারা. তাহলে আপাতত আমরা মেনে নিতাম।
এখন শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রধানমন্ত্রী না দেয়া পর্যন্ত আমরা আজ কাজে ফিরব না। আমাদের মজুরি বৃদ্ধির ধর্মঘট চলমান থাকবে। প্রসঙ্গত, এ আগে গত ২০ আগস্ট শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে এক বৈঠকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ১৪৫ টাকা মজুরি প্রথমে মেনে নেন। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য, উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব ড. মো. আবদুস শহীদ এমপি, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া, শ্রম অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক নাহিদুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীর অর রশিদ তালুকদারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাগণসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং চা-শ্রমিকদের পক্ষে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ওইদিন সন্ধা ৭টায় মাঠপর্যায়ে সাধারণ শ্রমিকরা ১৪৫ টাকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।