সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি), কবি ও শিশুসাহিত্যিক মাহবুব তালুকদারের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তার মরদেহ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আনা হয়। মাহবুব তালুকদারের দাফন হবে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। জুমার নামাজ শেষে জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. রুহুল আমিন। জানাজায় অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবীবুল আওয়াল। জানাজা শেষে তার মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়।
জানাজার আগে কাজী হাবীবুল আওয়াল বলেন, আমার কাছে তার পরিচয় একজন লেখক হিসেবে। ইতিহাস নিয়ে বেশ ভালো কিছু লেখা লিখেছেন। উনি লেখক হিসেবেই যেন বেঁচে থাকেন। মাহবুব তালুকদারের ছেলে শোভন মাহবুব বলেন, তার কথা ও কাজে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে তাকে মাফ করে দেবেন। গত বুধবার দুপুরে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাহবুব তালুকদারের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা, এক পুত্র সন্তানসহ অসংখ্য বন্ধুবান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার ৩ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ডা. আইরিন মাহবুব ঢাকায় বসবাস করছেন। আর ২ সন্তানের ১ জন কানাডায় ও ১ জন আমেরিকায় থাকেন। তিনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহবুব তালুকদারের দুই সন্তান দেশের বাইরে থাকায় ওইদিন তার লাশ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। তারা গত রাতে দেশে এসে পৌঁছেছেন। মাহবুব তালুকদার ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও মুজিব নগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাকে উপসচিবের পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সময়ে তিনি তার জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মাহবুব তালুকদার তার সহকারী প্রেস সচিব (উপসচিব)-এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মাহবুব তালুকদার ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্থাপত্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতাও করেছেন।
এছাড়া একজন বিশিষ্ট সৃজনশীল লেখক হিসেবেও মাহবুবের পরিচিতি রয়েছে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা চল্লিশটি। তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।