গোপালগঞ্জে অসময়ের তরমুজ ঝুলছে ভাসমান বেডের মাচায়। এ তরমুজের ভালো দাম পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি তরমুজ-১ ও সুইট ব্লাক জাতের তরমুজ বীজ ভাসমান বেডে আবাদ করে কৃষক এ বছর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ উৎপাদন করেছে। এরমধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জের কৃষকদের ভাসমান বেডে বাণিজ্যক তরমুজ চাষে এ বছরই প্রথম সাফল্য এসেছে বলে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। এ সাফল্যে ভাসমান বেডে সারা বছর তরমুজ চাষাবাদে আরো বেশি লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ভাসমান বেডে সবজি, মসলা চাষ গবেষণা , সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর প্রথম গোপালগঞ্জে ২শ’ কৃষক অন্তত ১ হাজার ভাসমান বেডে তরমুজের বাণিজ্যক চাষ করেন। প্রতিটি বেডেই তরমুজের আশানুরূপ ফলন হয়েছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শক্তি কীর্ত্তনীয়া, তারপদ বালা বলেন, এত দিন আমরা ভাসমান বেডে, বিভিন্ন প্রকার শাক, ঢেড়শ, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বঁধাকপি, শশা, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেছি। কৃষি গবেষণা ইনস্টিউিটের সহযোগিতায় ও পরামর্শে এ বছর প্রথম বানিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করেছি। তরমুজ চাষে কোন সেচ, কীটনাশক ও সার লাগেনি। সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করেছি। অর্গানিক পদ্ধতিতে মানব দেহের জন্য নিরাপদ তরমুজ আমরা সফলভাবে উৎপাদন করেছি। বজারে এ তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতিটি তরমুজ ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। কম খরচে তরমুজ উৎপাদন করে অধিক লাভবান হয়েছি। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহসীন হাওলাদার বলেন, এতদিন গবেষণাগারে ভাসমান বেডে তরমুজ উৎপাদন নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এ বছর প্রথম গোপালগঞ্জে কৃষককের ভাসমান বেডে বাণিজ্যিক তরমুজ চাষে সাফল্য মিলেছে। আমরা ভাসমান বেডের কৃষিকে আরো লাভজনক কৃষিতে পরিণত করতে চাই। তাই এ কৃষিতে নতুন নতুন উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদনে কৃষককে উৎসাহিত করছি। তেমনই একটি উচ্চ মূল্যের ফসল তরমুজ। একটি লাউ বিক্রি করে যেখানে কৃষক ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পান। সেখানে একটি তরমুজ বিক্রি করে কৃষক ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা পাচ্ছেন। এতে কৃষকের আয় বাড়ছে। গোপালগঞ্জ বড় বাজারের ফল বিক্রেতা রতন সাহা বলেন, এ বছর বাজারে অসময়ের তরমুজ প্রচুর আমদানী হয়েছে। এ তরমুজ খুবই রসালো ও মিষ্টি। তাই ক্রেতাদের কাছে চাহিদা রয়েছে বেশ ভালো। প্রতি কেজি তরমুজ আমরা ৬০ টাকা দরে ক্রয় করেছি। ক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি তরমুজ ৮০ থেকে ১শ’ টাকা দরে বিক্রি করছি। এ তরমুজে চাষিরা যেমন পয়সা পেয়েছেন তেমনি আমরাও লাভবান হয়েছি।
তরমুজ ক্রেতা তানজিলা মেহজাবিন বলেন, আগে আসময়ের তরমুজ বিদেশ থেকে আসত। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের প্রতিটি তরমুজ ৫০০ টাকায় কিনতে হত। এখন এতরমুজ দেশে হচ্ছে। ২শ’ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে এই তরমুজ কিনতে পারছি। এই তরমুজ খুবই সুস্বাদু।