মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

পোশাক-পরিচ্ছদ ও ইসলাম

জাফর আহমাদ:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শালীন পোশাক একজন শালীন, পরিশীলিতি, ভদ্র ও রুচিশীল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের মর্যাদার প্রতীক। অশালীন, অভদ্র, উচ্ছৃঙ্খল ও জংলি মানুষের পোশাক হলো অশালীন ও উদ্ভট; যা তার কদর্যকেই বৃদ্ধি করে। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জন্য সুন্দর ও রুচিশীল পোশাকও দান করেছেন। ‘হে বনি আদম! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাজিল করেছি। আর তাকওয়ার পোশাকই উত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। হে বনি আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য তাদেরকে বিবস্ত্র করেছিল।’ (সূরা আরাফ : ২৬-২৭)
মানুষ নৈতিক জীব। নৈতিকতাবিহীন যে জীব, তার নাম পশু। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মধ্যে লজ্জার অনুভূতি দিয়েছেন, কিন্তু তা পশুকে দেয়া হয়নি। মানুষ তার যৌনাঙ্গকে লজ্জার শীর্ষে স্থান দিয়ে থাকে। প্রকৃতিগতভাবে শরীরের এ বিশেষ স্থানগুলোকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করতে লজ্জা অনুভব করে। এরই ফলে মানুষ একে ঢাকার ব্যবস্থাও করে থাকে। আরবিতে লজ্জাস্থানকে বলা হয় ‘আওরাত’। পুরুষের আওরাত হলো নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। আর নারীদের পুরো শরীরই ‘আওরাত’-এর অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য আরবিতে নারীকে আওরাত বলা হয়। অর্থাৎ নারীর সারা শরীরই লজ্জাস্থান।
ইসলামে পোশাকের প্রাথমিক কথা হলো : প্রথমত, এ লজ্জাস্থানকে ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পোশাক তার দেহের সংরক্ষণ, সৌন্দর্য বা শারীরিক শোভাবর্ধন করবে। তৃতীয়ত, এ পোশাক হতে হবে তাকওয়ার পোশাক। অর্থাৎ সতর ঢাকার সাথে সাথে সৌন্দর্য চর্চার ক্ষেত্রে তা যেন সীমা ছাড়িয়ে গর্ব ও অহঙ্কারে পরিণত না হয়। আবার শালীনতা ও মর্যাদাকে বিকশিত করার পথে বাধার সৃষ্টি না করে। তাকওয়ার পোশাক বলতে আরো যা বুঝায় তা হলো, পুরুষ নারীসুলভ এবং নারী পুরুষসুলভ পোশাক পরবে না বা আচরণ করবে না। এক জাতি নিজেকে অন্য এক জাতির সদৃশ বানাবে না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত বিবেচিত হবে। পোশাক ব্যক্তির মর্যাদার নিম্নমানেরও হবে না। যেমন : রাসূলে করিম সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর দেয়া নিয়ামতের নিদর্শন তাঁর বান্দার ওপর দেখতে ভালোবাসেন।
(অর্থাৎ যাকে যেরূপ নিয়ামত দেয়া হয়েছে তদনুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করা আল্লাহ পছন্দ করেন) (তিরমিজি আবওয়াবুল আদাব) আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনি আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও।’ (সূরা আরাফ : ৩১) উল্লিখিত আয়াতে ‘নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও’ এখানে পরিপূর্ণ পোশাক-পরিচ্ছদের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদাতে দাঁড়াবার সময় শুধু লজ্জাস্থান ঢাকাই যথেষ্ট নয়। বরং একই সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পূর্ণ পোশাক পরে নিতে হবে, যা শালীন ও মার্জিত। যার মাধ্যমে লজ্জাস্থান ঢাকার সাথে সাথে সৌন্দর্যের প্রকাশও ঘটবে। আরবের মূর্খ যুগের অজ্ঞ লোকেরা নিজেদের ভ্রান্তনীতির ভিত্তিতে ইবাদাতের ক্ষেত্রে যেসব কাজ করত এ নির্দেশে তারও প্রতিবাদ করা হয়েছে। তারা মনে করত উলঙ্গ বা অর্ধউলঙ্গ হয়ে এবং নিজেদের আকার আকৃতি ও বেশভূষা বিকৃত করে আল্লাহর ইবাদত করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘হে নবী! আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের নারীগণকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এটি অধিকতর উপযোগী পদ্ধতি। যাতে তাদেরকে চেনা সহজ হয় এবং কষ্ট না দেয়া হয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা আহজাব : ৫৯)
আমাদের প্রথমেই একটা বিষয় ভালো করে মনে রাখা প্রয়োজন, আমাদের চির ও চরম শুত্রু শয়তান প্রতারণা করে প্রথমেই নির্লজ্জ উলঙ্গপনার মাধ্যমে মানুষের নৈতিকতার মেরুদ- ভাঙার পথকেই বেছে নিয়েছিল। তাই সে প্রথম মহামানব হজরত আদম আ: ও তাঁর সঙ্গিনী হজরত হাওয়া আ:কে অনাবৃত করার নিমিত্তে গাছের ফল ভক্ষণে উৎসাহিত করল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের পরস্পর থেকে গোপন রাখা হয়েছিল, তাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিলো। (সূরা আরাফ : ২০) এভাবে প্রতারণা করে সে (শয়তান) তাঁদের দু’জনকে ধীরে ধীরে নিজের পথে নিয়ে এলো। অবশেষে যখন তারা সেই গাছের ফল আস্বাদন করল, তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজেদের শরীর ঢাকতে লাগল জান্নাতের পাতা দিয়ে। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বলল- ‘আমি কি তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করিনি এবং তোমাদের বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?’ (সূরা আরাফ : ২২)
প্রকৃতপক্ষেই লজ্জা বা হায়া এমন একটি অনুভূতি, যা না থাকলে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনো যুক্তিসঙ্গত পার্থক্য রেখা টানার উপায় থাকে না। পশুদের মধ্যে লজ্জার অনুভূতি নেই বলেই তারা খোলামেলা থাকে এবং জনসমক্ষে যৌনকর্মেও লিপ্ত হতে তাদের বাঁধে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মানুষও আজ লাখ লাখ জনতার সামনে কত বেশি বিবস্ত্র হওয়া যায়, এজন্য এক দিকে সে ধরনের নগ্নতার পোশাক ও যৌন অঙ্গভঙ্গিসম্পন্ন ফিল্ম তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আল কুরআনের পরিভাষায় এটি সুস্পষ্ট শয়তানি কাজ। শয়তানের ইন্ধনেই পৃথিবীর মুসলিম, অমুসলিম এ ধরনের বেহায়াপনার পোশাক তৈরি ও পরিধানের সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে। কুরআনে উল্লিখিত তাকওয়ার পোশাক বাদ দিয়ে মুসলমান যেদিন শয়তানি পোশাক পরিধান শুরু করেছে, সেদিন থেকেই মুসলমানদের কপাল ভাঙা শুরু হয়েছে। অনাচার, অশান্তি ও ব্যভিচার আর নারীর লাঞ্ছনা ও ব নার দুষ্টক্ষত সমাজকে আজ বিষিয়ে তুলেছে। প্রতিদিনের খবরের কাগজে নারী সম্পর্কীয় অপ্রীতিকর ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাবলীর কারণ কি? কেন আজ নারীরা পৃথিবীতে লাঞ্ছিত, বি ত ও অপমানিত হচ্ছে? সূরা আহজাবের ৫৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যাতে তাদেরকে চেনা সহজ হয় এবং কষ্ট না দেয়া হয়।’ এ বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন তাফসির বিশারদ বলেছেন যে, ‘মেয়েরা কুরআনের উল্লিখিত নির্দেশ মান্য করে, তবে কোনো ফাসেক তাদেরকে উত্ত্যক্ত করার দুঃসাহস করবে না।’ (জামেউল বায়ান, ইবনে জারির তারারি)
‘মেয়েরা ঘর থেকে বের হরার সময় তাদের সতর ও পবিত্রতাসম্পন্ন হবার কথা প্রকাশ করা উচিত। এর ফলে সন্দেহযুক্ত চরিত্র ও কর্মের অধিকারী লোকেরা তাদেরকে দেখে কোনো প্রকার লোভ ও লালসার শিকার হবে না।’ (আহকামুল কুরআন, আল্লামা আবু বকর জাস্সাস)
‘এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, লোকেরা যেন জানতে পারে এরা দুশ্চরিত্রা মেয়ে নয়। কারণ যে মেয়েটি নিজের চেহারা ঢাকবে, অথচ চেহেরা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার কাছে কেউ আশা করতে পারে না যে, সে নিজের সতর অন্যের সামনে খুলতে রাজি হবে। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে, এ মেয়েটি পর্দানশীন, একে জিনার কাজে লিপ্ত করার আশা করা যেতে পারে না।’ (তাফসিরে কবির, ইমাম রাযী) ‘তাদেরকে এ ধরনের অনাড়ম্বর লজ্জা নিবারণকারী পোশাকে সজ্জিত দেখে প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী জানবে তারা অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের পূত-পবিত্র মেয়ে, কোনো অসদাচারী মানুষ যার কাছে নিজের কামনা পূর্ণ করার আশা করতে পারে না। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত ও জ্বালাতন করা হবে না। (সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী )
আল্লাহর রাসূল সা: আল-কুরআনের আলোকে এ ধরনেরই একটি সোনালি সমাজ বিনির্মাণ করেছিলেন। যার দরুন রাসূল সা: সুস্পষ্ট ও অনেকটা সগর্ভে বলেছিলেন, ‘তোমরা দেখবে হাজরা মাউত থেকে সান’আ পর্যন্ত একজন সুন্দরী-পূর্ণযৌবনা, মূল্যবান অলঙ্কার পরিহিতা মহিলা দিনে-রাতে একাকিনী পথ চলবে, কেউ তার দিকে ফিরেও থাকাবে না।’ সত্যিই এ ধরনের একটি সমাজ কায়েম হয়েও ছিল। আল-কুরআনই ছিল এর প্রধানতম হাতিয়ার। আমাদেরও একটি সুস্থ সমাজ কায়েমের জন্য আল কুরআনের উল্লিখিত আয়াতের কাছে আসতেই হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com