জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে আমরা কমবেশি অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ি। তখন বাধ্য হয়েই ব্যবসায়-বাণিজ্য কিংবা দোকানে কমবেশি ঋণ করে সাময়িকভাবে জীবন পরিচালনা করতে হয়। পরবর্তীতে এই ঋণের চিন্তায় জীবনে অভিশাপ নেমে আসে। শারীরিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে ঘুম পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। সন্তানের লেখাপড়া, বাজার ও খাবার, চিকিৎসাসহ জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। এ জন্যই রাসূল সা: সর্বদা ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতেন।
বুখারি শরিফের বর্ণনায় এসেছে, হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূল সা: সর্বদা ঋণমুক্তির জন্য দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাঅছামি ওয়াল মাগরামি’। অর্থ হলো- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে মুক্তি চাই।’
ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এমন একটি দোয়া রয়েছে, যা নিয়মিত পাঠে ঋণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই নেবেন। হজরত আলী রা: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে রাসূল সা:-এর শেখানো দোয়াটি পাঠ করতে বললেন। দোয়াটি হলো- ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। তোমাকে ছাড়া আমাকে অন্য কারো মুখাপেক্ষী করিও না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো। যা তিরমিজি ও মুসনাদ আহমদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে।
ঋণ মানুষকে চিন্তিত করে। এই ঋণের কারণে দুশ্চিন্তা হয়। এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পতে রাসূল সা: একটি দোয়া পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইনি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজজিওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া দ্বালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে। অপারগতা ও অলসতা থেকে। কৃপণতা ও ভিরুতা থেকে। ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি)
ঋণ করে অবশ্যই সেই টাকা দ্রুত পরিশোধ করা জরুরি। কেননা যেকোনো সময়ে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে পারি। তখন সেই টাকা অবশ্যই আমার ওয়ারিশদের পরিশোধ করতে হবে; অন্যথায় পরিশোধ না হওয়ায় গুনাহগার হতে হবে। বুখারি শরিফের বর্ণনায় রয়েছে- রাসূল সা:-এর কাছে কোনো ঋণী ব্যক্তির জানাজা উপস্থিত করা হলে, তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ রেখে গেছে কি? যদি বলা হতো যে সে তার ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ রেখে গেছে। তখন তার নামাজে জানাজার আদায় করতেন। অন্যথায় বলতেন, তোমরাই নামাজে জানাজা আদায় করে নাও।’ আসুন আমরা যারা ঋণগ্রস্ত রয়েছি হারাম কর্ম থেকে মুক্ত থেকে হালাল উপায়ে আয় করে ঋণ দেয়ার চেষ্টা করি। প্রতি ফরজ নামাজ আদায়ের পর ঋণমুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। যেহেতু ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। একনিষ্ঠতার সাথে ইবাদত-বন্দেগি করে নিজেকে সঁপে দেই। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেবো এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেবো। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেবো এবং তোমার অভাব দূর করে দেবো না।’ (তিরমিজি) লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক