চা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক যৌগ আছে। যা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। একই ভাবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে নিয়মিত চা পানে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে, তাও আবার ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। তবে কোন চা পান করছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনি কতটা ঝুঁকিমুক্ত হবেন। ৮টি দেশের ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের উপর পরিচালিত নতুন গবেষণা আবিষ্কার করেছে, কালো, সবুজ ও ওলং চায়ের মাঝারি ব্যবহার টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব ডায়াবেটিস (ইএএসডি) স্টকহোম, সুইডেনের বার্ষিক সভায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে।
গবেষকরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ কাপ চা পান করলে গড়ে ১০ বছরের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। চীনের উহান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রধান লেখক জিয়াইং লি বলেছেন, ‘আমাদের গবেষণার ফলাফল সত্যিই অবাক করার মতো, টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে দিনে ৪ কাপ চা পান করার মতো সহজ কিছু আর হতে পারে না।’
প্রথমত তারা চায়না হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন সার্ভে থেকে টি২ডি (টাইপ ২ ডায়াবেটিস) (গড় বয়স ৪২) এর কোনো ইতিহাস নেই এমন ৫ হাজার ১৯৯ প্রাপ্তবয়স্কদের (২৫৮৩ জন পুরুষ, ২৬১৬ জন নারী) ডাটা সংগ্রহ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা ১৯৯৭ সালে যুক্ত হন গবেষণা কাজে। গবেষকরা একটানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাদের শারীরিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রথমে অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে জানা হয়, তারপর নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনের মতো জীবনযাত্রার বিষয়গুলোর উপর তথ্য প্রদান করে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২ হাজার ৩৭৯ (৪৬ শতাংশ) জন নিয়মিত চা পান করার অভ্যাসের কথা জানান। গবেষণা শেষে দেখা যায় তাদের মধ্যে মাত্র ৫২২ (১০ শতাংশ) জন টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
গবেষকরা দেখেছেন, বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার মতো জীবনযাত্রার ভুল অভ্যাসের কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে তা সে চা পানকারী হোক আর না হোক। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনা জরুরি। তবে সঠিক জীবনযাপনের পাশাপাশি নিয়মিত কালো, সবুজ বা ওলং পান করলে এই রোগের ঝুঁকি আরও কমে।
গবেষকরা জানান, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা প্রতিদিন ১-৩ কাপ চা পান করেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৪ শতাংশ কমে, আর যারা প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ কাপ পান করেন তাদের ঝুঁকি কমে ১৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চায়ের নির্দিষ্ট উপাদান যেমন পলিফেনল, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
ওলং চা হলো একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা চা, যা সবুজ ও কালো চা তৈরি করতে ব্যবহৃত একই উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়। পার্থক্য হলো এই চা ভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সবুজ চাকে বেশি অক্সিডাইজ করার অনুমতি দেওয়া হয় না, কালো চা কালো হওয়া পর্যন্ত অক্সিডাইজ করার অনুমতি দেওয়া হয় ও ওলং চা আংশিকভাবে অক্সিডাইজ করা হয়। সূত্র: লাইভমিন্ট/নিউজ মেডিকেল নেট