দেবী দুর্গা কৈলাশে ফিরে যাবেন। তাই ভক্তদের মনে দুঃখ। তবে তাদের কষ্ট লাঘব করতে আগামী বছর আবার আসবেন দুর্গা। দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য ভক্তরা মত্ত হয়েছেন সিঁদুর খেলায়। গতকাল বুধবার (৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিহিত পূজা এবং পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে দশমীর পূজা শেষ হয়। এরপর ভক্তরা মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে গত দুই বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় গতবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। করোনার কারণে তখন হয়নি বিসর্জনের শোভাযাত্রা, হয়নি সিঁদুর খেলা।
দুর্গাপূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। দুর্গাকে নিয়ে যাওয়ার আগে সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর আঙুলে লেগে থাকা বাকি সিঁদুরটুকু তারা একে-অপরের মুখে মাখেন। এই সিঁদুর মাখার রীতি অনেক সময় দশমী ঘরে পালন করা হলেও অনেকে আবার নিজেদের ঘরেই খেলে থাকেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করেন, নাচ-গান করেন, যেন সারাটা বছর এমন আনন্দেই কাটে। সধবারা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সঙ্গে করে শাঁখা-সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা-সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা। এই সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সবাই ম-পে ভিড় করেন, নেচে-গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিত নারীরাও গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর।
মায়ের চরণে সিঁদুর দিতে আসা কবিতা ম-ল বলেন, ‘বিয়ে ছাড়া মাথায় সিঁদুর দেওয়া যায় না। আমাদের একদিন বিয়ে হবে, তখন ভালো স্বামী ও সুখের সংসারের কামনায় আমরা সিঁদুর খেলায় আসি। বিয়ে হলে আমরাও সিঁথিতে সিঁদুর পরবো।’
তৃণা ঘোষ বলেন, ‘স্বামীর মঙ্গল কামনায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করি। তার পায়ে সিঁদুর ছুঁয়ে দিয়ে তার কিছুটা সিঁথিতে লাগালে সংসারে মঙ্গল হয়।’ মহালয়া থেকে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আসার ঘণ্টা বাজে। ষষ্ঠীতে তিনি ভক্তদের মাঝে অধিষ্ঠিত হন। আর দশমীতে তিনি কৈলাশ চলে যান। আজ বিজয়া দশমী। দুর্গা মায়ের বিদায়ের দিন। নৌকায় বসে দেবী দুর্গা ফিরে যাবেন। দুপুর ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। এটি শেষ হয় পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে গিয়ে। সেখানে করা হয় প্রতিমা বিসর্জন।