ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজট
টঙ্গী থেকে বনানী পর্যন্ত গাড়ি চলে থেমে থেমে। গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) ভোর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর যানজট রাজধানীর বনানী পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। কোনও যানবাহনই এগোতে পারছিল না। বেলা বাড়তেই সড়কে মানুষের আনাগোনা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে যানজটও। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা থেকে গাজীপুর এবং গাজীপুর থেকে ঢাকাগামী অফিস করা যাত্রীরা। সকাল থেকেই ময়মনসিংহগামী সড়কের টঙ্গীর মিলগেট থেকে রাজধানীর বনানী এবং ঢাকাগামী সড়কের টঙ্গীর বোর্ড বাজার পর্যন্ত যানজট রয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী নূরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সামনে এগোচ্ছেই না। সকাল ৮টায় অফিসে উপস্থিত থাকার কথা। এখন বাজে সাড়ে ৮টা। আজ অফিস করতে পারবো কি-না জানি না। প্রায়ই এই মহাসড়কে জ্যামে আটকে থাকতে হয়। আজ এমন অবস্থা হয়েছে, না পারছি সামনে যেতে, না পারছি গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় ফিরে যেতে।’ টঙ্গী কলেজগেট এলাকার ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল ৭টায় গাজীপুরের মাওনায় অফিসে যান। আজ সকালে বের হয়েই দেখেন, সড়কে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কোনও গাড়ি সামনে এগোচ্ছে না। তাই যানজটে আটকে থাকার ভয়ে অফিসে না গিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিন ও রাতে টানা বৃষ্টিতে এই মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজকের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হবেবলে ধারণা করছেন চালক ও যাত্রীরা।
বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা হুমায়নি কবির বলেন, ‘সড়কের পাশের ড্রেন আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি উপচে মহাসড়কের গর্তে গিয়ে জমা হচ্ছে। তাছাড়া বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক কিছুটা সরু হয়ে গেছে। খানাখন্দে ভরা সড়কে বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ এখন নিয়মিত পরিণত হয়েছে।’ জামালপুরের রাজীব পরিবহনের চালক মাইনুদ্দিন জানান, টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় গাড়ি চলছে এক লেনে। উভয়মুখী সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। মহাসড়কের গাজীপুরের অংশে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রী এলোমেলোভাবে ফেলে রাখায় সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন যদি টঙ্গীর মিলগেটের অল্প রাস্তাটুকু মেরামত করে দিতো, তাহলে আজকে এরকম যানজট হতো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আব্দুল্লাহপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্মরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার দিনব্যাপী বৃষ্টি হওয়ায় সড়কের গর্তে পানি জমে গেছে। ফলে চলাচলরত যানবাহনের চাকা ওইসব গর্তে পড়ে আরও বড় গর্ত হয়েছে। এতে যানবাহনের চাকা গর্তে আটকে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’ বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলামের জানান, সড়কের স্থায়ী নির্মাণকাজ চলছে। নভেম্বরের দিকে কাজ শেষ হলে আর ভোগান্তি থাকবে না। যেখানে বেশি ভাঙা, সেখানে মেরামত করছি। বৃষ্টির কারণে আবার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্থায়ী কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজট:যত্রতত্র উন্নয়নকাজের জন্য রাস্তা সংকুচিত আর ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির প্রভাবে পানি জমে যাওয়ায় ঢাকা-টঙ্গী-ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। গতকাল বুধবার ভোর থেকে যানজটের শুরু হয়। অফিসের সময় বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এ যানজট। যা বনানী অতিক্রম করেছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে সড়কে আটকা যাত্রীরা। সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে সোমবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি ছিল। কোথাও কোথাও থেমে থেমে যানবাহন চলছিল। বৃষ্টিতে মহাসড়কে নতুন করে খানাখন্দ তৈরি হওয়া ও পুরোনো খানাখন্দগুলো বড় আকার ধারণ করায় অনেক জায়গায় গর্তে পরিণত হয়েছে।
পুলিশ ও বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা ইট, বালুসহ নানা উপকরণ দিয়ে সেই খানাখন্দ মেরামত করলেও ভারী যানবাহন চলাচল করায় তা উঠে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব খানাখন্দ ও গর্তের কারণেই যানজট তৈরি হয়েছে। অপরদিকে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় লেনে গাড়ি চলত, সেখানে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় লেন সংকুচিত হয়ে পড়ে ঢাকায় প্রবেশে ও ঢাকা থেকে বের হতে এক লেনে চলাচল করছে গাড়িগুলো। সড়কের পরিস্থিতি তুলে ধরে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকার পরিদর্শক শেখ শাহাদাত আলী বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা বেশ বাজে। প্রকল্পের কোনো লোক আমাদের কথা শোনেনি। তারা মিলগেটের অল্প একটু রাস্তা, সেটাও ঠিক করে দেয়নি। যানজট চলে গেছে বোর্ডবাজার পর্যন্ত।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) অশোক কুমার পাল বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় সড়কে গর্ত করে উড়াল সেতুর পিলার তোলা হয়েছে। বৃষ্টিতে সেই গর্তের পাড়ের মাটি ভেঙে পড়ায় মহাসড়কের ওই অংশে ঢাকামুখী এক লেনে গাড়ি চলাচল করছে। এখানেই মূলত যানজট হচ্ছে। ভোগান্তির বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার প্রকল্প পরিচালক মহিরুল ইসলাম বলেন, সড়কের স্থায়ী নির্মাণকাজ চলছে। নভেম্বরের দিকে কাজ শেষ হলে আর ভোগান্তি থাকবে না।