পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে খারাপ অবস্থা চলছে। শক্তিশালী দেশগুলো যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এতে তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতিসংঘের আঙিনায় শেখ হাসিনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম’। মন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে আলাপ না করেই স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) বসানো হলো। এর পরিণতি আমরা ভোগ করছি। যাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন, তাদের কিছুই হয় না। যুদ্ধ থামাতে যাই করা হোক তা জাতিসংঘের মাধ্যমে সমন্বয় করা হলে ভালো হয়, কার্যকর হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সব সদস্যদের নিয়ে জাতিসংঘ কাজ করে। কিন্তু ৫ স্থায়ী সদস্যের কাছেই সবকিছু। এটার পরিবর্তন করা দরকার। প্রতিষ্ঠাকালে তাদের মতো তারা সাজিয়ে রেখেছে, ১৯৩ রাষ্ট্রের ভোট একটি করে। তাই সবার সমান সুযোগ থাকা দরকার। জাতিসংঘের নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, স্বাস্থ্যের উন্নয়নে যেমন অবদান আছে, তেমনি তাদের ব্যর্থতাও রয়েছে। যুদ্ধ থামাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দেখেছি আমরা।
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী চান, কারো সঙ্গে শত্রুতা না করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। বঙ্গবন্ধুর এই নীতি ছিল। যখন ইস্টার্ন ও সোভিয়েত ব্লক আমাদের চাইছিল, বঙ্গবন্ধু কারও পক্ষ না নিয়ে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক করেন। এটা ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। প্রধানমন্ত্রীও তাই করছেন। আমরা সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক করতে পারলে আর অভাব-অনৈক্য থাকবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ থাকবে না, সন্ত্রাস থাকবে না। ২০১২ সালে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এটা দেখে আলবেনিয়াসহ আরও অনেক রাষ্ট্র তাদের দেশের গণহত্যার বিষয়ে স্বীকৃতি পেতে প্রস্তাব দিয়েছিল। জাতিসংঘ সেখানে কৌশলে একটি দিবসকে (৯ ডিসেম্বর) গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
মন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে অনেক সুবিধা হারানোর কথা রয়েছে। তবে আশার খবর হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত তারা চলমান সুবিধাগুলো আমাদের দেবে। প্রযুক্তি বিষয়ে সুবিধা দেবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। গুম নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হয় তা সঠিক নয় দাবি করে মোমেন বলেন, ৬৮ জনের গুমের তথ্য আমরা জানি। এদের মধ্যে দুজন আবার ভারতীয় নাগরিক। তাদের বাদ দিলে সংখ্যা ৬৬ জনে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ বন্দুকধারীদের গুলিতে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং-এর শিকার হয়। কিন্তু গত ৩ বছরে বাংলাদেশে এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং হয়েছে-তা আমার জানা নেই। যারা মারা গেছেন তারা অপরাধী।
মন্ত্রী আরও বলেন, এবার আমাদের মাঝে সুযোগ এসেছে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার। আমেরিকার দুজন সিনেটর প্রস্তাব এনেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে হবে। এজন্য গণহত্যা মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গবেষকদের তথ্য দিতে হবে। দুঃখের বিষয় হলো আমাদের হাতে কোনো ‘রেডিমেট তথ্য’ নেই। কোনো মন্ত্রণালয় কাজ করেনি, আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলাম ফোরামের সভাপতি ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখনে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক রশিদ আসকারী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলার পরিচালক আজিজুর রহমান প্রমুখ।