গোপালগঞ্জে রবি মৌসুমে ৩ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় রবি মৌসুমে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ওই অধিদপ্তর। গত মৌমুমে এ জেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ২৫২ হেক্টার জমিতে রবি ফসলের চাষাবাদ হয়। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে খাদ্য শস্য, তেল ফসল, সবজিসহ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে হিসোব এ বছর ৩ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, রবি মৌসুমে জেলার ৮০ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হবে। এরমধ্যে ৫৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে উফশী ও ৬ হাজার হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে গম, ১০০ হেক্টরে ভূট্টা, ১৬০ হেক্টরে আলু, ৩০ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৪ হাজার ৫০০ হেক্টরে পেঁয়াজ, ১১০ হেক্টরে রসুন, ৮১০ হেক্টরে ধনিয়া, ২৫০ হেক্টরে মরিচ, ১০০ হেক্টরে কালজিরা, ৪ হাজার ৫০০ হেক্টরে সরিষা, ৭৫ হেক্টরে তিসি, ৬০ হেক্টরে সূর্যমুখী, ৮৪৩ হেক্টরে চিনা বাদাম, ৩ হাজার ৫৭৭ হেক্টরে মসুর,৯ হাজার হেক্টরে খোসারী, ১০০ হেক্টরে মুগ, ২০০ হেক্টরে মটর, ৫০ হেক্টরে মাসকলাই ও ৩ হাজার ১৭৪ হেক্টরে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে আমরা গোপালগঞ্জে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩ হাজার ১৮ হেক্টরে ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করছি। ধান ও তৈল বীজ উৎপাদনের ওপর আমরা বেশি জোর দিয়েছি। তাই ইতিমধ্যে আমরা বীজ ডিলারদের সাথে মত বিনিময় করেছি। তারা চাহিদামত হাইব্রিড ধানবীজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা কৃষকের প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক সহজ লভ্য করতে কাজ করছি। সেই সাথে আমরা তাদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিয়ে ধানের সর্বোচ্চ ফলন ফলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত বছর আমরা ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তেল ফসল করেছিলাম। বছর আমরা ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তেল ফসল করব। এসব জমিতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি-১৪ ও বারি-১৮ জাতের সরিষা করা হবে। আমাদের অনেক জমিতে আমন করা হয়। তারপর জমি পতিত থাকে। তারপর বোরো করা হয়। এ বছর ওইসব পতিত জমিতে স্বাল্প জীবনকাল মেয়াদী ১৪ ও বারি-১৮ জাতের সরিষা আবাদ করা হবে। এখান থেকে অন্তত ১ হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদিত হবে বলে আশা করছি। এ তেল জেলার ১০ ভাগ তেলের চাহিদা পূরণ করবে। মাঠ থেকে সরিষা তোলার পর বোরো আবাদ করা হবে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ধান, তেল ফসল, গম, সবজি, মসলাসহ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা সম্বলিত চিঠি ৫ উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠানো হয়েছে। কৃষি অফিসগুলো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ফসল চাষাবাদের প্রতিবেদন উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠাবেন। উপজেলা কৃষি অফিসগুলো আবার এ প্রতিবেদন গুলো একত্রিত করে আমাদের কাছে পাঠাবেন। এইভাবে কৃষি আবাদ বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সাথে এ প্রতিবেদনগুলো দিয়ে একটি বই বানানো হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার নিটুল রায় বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির টার্গেট নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সহ সকল পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে আমরা নিয়মিত সভা করছি। বীজ ডিলার ও কৃষকদের নিয়ে মত বিনিময় করছি। কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। তাদের ফসল আবাদ বৃদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া কোটালীপাড়ায় আমরা নতুন নতুন ফসলের প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করেছি। সরকারি কৃষি প্রণোদনার সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ কৃষকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আশা করছি এ বছর কৃষক চাষাবাদ বাড়িয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করবেন। আমারা কৃষকদের কাছ থেকে তেমনই সাড়া পাচ্ছি ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীণাথপুর ইউপির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবদাস মল্লিক বলেন, আমরা চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক ভাইদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। তারা আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে রবি মৌসুমে অধিক জমি চাষাবাদের পরিকল্পনা করছেন। অধিক জমিতে চাষাবাদ মানেই অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা । গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুমন মিয়া (৪৫) বলেন, আগামী রবি মৌসুমে মসুর, সরিষা, ধান, সবজিসহ সব ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে। তারা আমাদের সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তাই আমরাও অধিক জমিতে চাষাবাদ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।