মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

দেশে দুর্ভিক্ষ হলে দায় শেখ হাসিনা সরকারকে নিতে হবে : মির্জা ফখরুল 

শাহজাহান শাজু:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে জনতার ঢল 

দেশে দুর্ভিক্ষ হলে এর দায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
গতকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রংপুরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এর আগে ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ খাবার খেতে না পেরে রাস্তায় পড়েছিল। এখন আবার সেই অবস্থা ফিরে এসেছে। ১০ কেজির চাল খাওয়াতে চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। শাকসবজিও মানুষ কিনতে পারছে। এটা দুর্ভিক্ষের লক্ষণ।
তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। একটাই দাবি, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’ ‘সরকারকে পদত্যাগ করে ৎত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। তারপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে ৷ বিএনপির সংসদ সদস্যরা রেডি আছেন নির্দেশ পেলেই পদত্যাগ করবেন,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সামনে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে কিন্তু দুর্ভিক্ষ আসার আগেই শেখ হাসিনার পতন ঘটাব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে হঠাৎ জঙ্গিবাদের ধোঁয়া তুলছে, আওয়ামী লীগ বলছে, জঙ্গি, অগ্নিসন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না । কিন্তু এসব অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গেছে এই অস্ত্র আর চলবে না। আপনাদের চেহারা সারা দুনিয়া জেনে গেছে। আমেরিকা বলছে, সরকারের দেয়া মানবাধিকার রিপোর্টগুলো মিথ্যা।
বর্তমান দেশের ভিত জিয়াউর রহমান গড়েছেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী টুকু বলেছেন, বর্তমান দেশের ভিত জিয়াউর রহমান গড়েছেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী টুকু বলেন, ‘যুদ্ধে জয়লাভ করলাম আমরা, ক্ষমতায় বসল আওয়ামী লীগ। দেশ তারা ফাঁকা করে দিয়েছিলেন। এরপর জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্ব নিয়েছে। বর্তমান দেশের ভিত জিয়াউর রহমান করে করেছেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করেছিল। পরে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।’
তিনি বলেন, বাকশালী আওয়ামী লীগ আবার গণতন্ত্রকে একনায়কতন্ত্রে প্রতিষ্ঠা করেছে। শেখ হাসিনার সরকার দিনের ভোট রাতে করে লুট করে নিয়েছে। এখন তারা জোর করে ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের নামে জনগণের সাথে ধোকাবাজি করছে। কিন্তু এর আড়ালে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে।
রংপুরে সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতার মৃত্যু: রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে শনিবার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ চলাকালে মোস্তাফিজুর রহমানের নামে একজন নেতা মারা গেছে।
বিকেলে সমাবেশ ম থেকে ওই নেতার মৃত্যুর বিষয়টি মাইকে ঘোষণা করে নিশ্চিত করা হয়। তিনি দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
‘কথা একটাই, সরকারের পতন’: সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর অফিস ২৯ অক্টোবর ২০২২,
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশার জামিদ বলেছেন, ‘কথা একটাই, গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের যে পদযাত্রা, এই পদযাত্রা থেকে আমরা আর কখনোই পিছপা হবো না। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না, যতক্ষণ না গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।’ তিনি বলেন, জনগণের ম্যান্ডেটহীন এই সরকার। বিএনপির উপর দায়িত্ব এসেছে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। জনগণ সেই ম্যান্ডেট বিএনপিকে দিয়েছে।’
বিএনপি’র মহাসমাবেশ ৭০০ ভ্যানে রওনা দিলেন সৈয়দপুর নেতাকর্মীরা: রংপুর পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা দু’দিনের পরিবহন ধর্মঘটে অচল উত্তরের আট জেলা। এ কারণে বিএনপি আহুত রংপুরের মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাটারিচালিত ৭০০ ভ্যানে রওয়ানা দিয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর বিএনপি নেতাকর্মীরা। সৈয়দপুর জেলা বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক ও লোকমান হাকিমের নেতৃত্বে ওইসব ভ্যান কামারপুকুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে যাত্রা শুরু করে। সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার বলেন, রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে দুদিন আগে থেকেই পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বিএনপি কোনো সমাবেশের ডাক দিলেই আওয়ামী সরকার সব সময় এমনটাই করে থাকে। তবে সব বাধা-বিঘœ উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করা হবে। রংপুরের গণসমাবেশ হবে জনসমুদ্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাবেশ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ডাক দেয়া হবে। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর সাড়া দেখে ভয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই তারা বিএনপির গণজোয়ার বন্ধে পরিবহন ধর্মঘটের নামে পায়তারা করছে।
নীলফামারী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শানু বলেন, রংপুর পরিবহন মালিক সমিতির ডাকে এ ধর্মঘট চলছে। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়। মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচলের প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছে। এই সময়ের মধ্যে দাবিগুলো মানা না হলে প্রয়োজনে আরো সময় বাড়তে পারে।
সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা মো: আব্দুল খালেক বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায় অবিচার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্চান ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে বিএনপির রংপুর মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভ্যানে করে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মো: মোখছেদুল মোমিন জানান, বিভিন্ন দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন। এটা পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ব্যাপার, আওয়ামী লীগের নয়। বিএনপির নেতারা প্রতিটি সমাবেশে মনগড়া বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করছে।
নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা আগে রংপুরে বিএনপির সমাবেশ শুরু: পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে রংপুরে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী দলটির বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ সমাবেশ শুরু হয়। গতকাল শনিবার রংপুর কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে রংপুর মহানগর বিএনপি এ গণসমাবেশের আয়োজন করে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশস্থলের আশপাশে এবং শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। আয়োজকরা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নিন্দা, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও যশোরে পুলিশের অভিযানে দলের পাঁচ নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছে যে, আগামী সাধারণ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী সেটির সুযোগ নেই বলে তা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকে এবং তাদের অনেকেই সেখানে রাত কাটায়। সমাবেশটি বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির চতুর্থ সমাবেশ, প্রথমটি চট্টগ্রামে, দ্বিতীয়টি ময়মনসিংহে এবং তৃতীয়টি হয়েছে খুলনায়। আগামী বছরের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সমর্থন জোগাতে অন্য বিভাগীয় সদর শহরেও অনুরূপ সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে দলটি। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে বিএনপি। সমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে রংপুর শহর কার্যত মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকেই বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন এবং কয়েক হাজার দলীয় নেতাকর্মী সেখানে রাত কাটান। শুক্রবার সকাল থেকে রংপুর ও সারাদেশের মধ্যে ট্রেন ছাড়া যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ থাকলেও বিভাগের আট জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। ইউএনবির সাথে আলাপকালে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, শনিবার তাদের ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্ভাব্য বাধা ও হয়রানি এড়াতে তারা সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। সমাবেশকে সফল করতে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, প গড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ট্রেন, মোটরবাইক, অটোরিকশা, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্নভাবে রংপুরে আসেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ অ লে ধর্মঘট পালন করছে।

তবে রংপুরের ক্ষমতাসীন দল পরিবহন ধর্মঘটের সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন অভিযোগ করেন, তাদের দলের সমাবেশে লোকজন যাতে না আসে সেজন্যই এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।গত সপ্তাহে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। তবে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাধা অতিক্রম করে সেই কর্মসূচিতে অংশ নেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com