মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

অনুকূল পরিবেশ ও সিত্রাংয়ের প্রভাবে ব্যাপক ইলিশ ধরার আশাবাদ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আবারো মাছ ধরা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মাছ ধরার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা করেছেন জেলেরা। গত ৬ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ৩৮টি জেলায় আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে এবং সমুদ্রে মাছ ধরার এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগে ভোলার লালমোহন উপজেলার জেলে মোহাম্মদ মিজান গত কয়েক দিন ধরেই তার ট্রলার মেরামত করেছেন, জাল ঠিক করেছেন। শুক্রবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরপরই জাল ফেলার পরিকল্পনানিয়ে তিনি সব ঠিকঠাক করেন। দীর্ঘ দিনের নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এবারে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, লম্বা দিন তো বন্ধ ছিল, আবার ঝড় গেছে, পানি বেড়ে গেছে। মাছ বেশি উঠবে। সকালে আড়তে তুলবো। দেখা যাক। মাছ ধরা শুরু হওয়াকে কেন্দ্র করে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলেপাড়া, ইলিশের ঘাট, আড়ত ও বরফকলগুলো। এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে উপকূলের অন্তত দুই লাখ নিবন্ধিত জেলেকে পুনর্বাসন বাবদ প্রত্যেককে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। আবার অনেককে বিকল্প কাজে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানায় মৎস্য অধিদফতর। ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৬ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত টানা ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। ইলিশের ছয়টি অভয়ারণ্য, সমুদ্রসহ মোট ৩৮টি জেলার ১৭৪টি উপজেলায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর মধ্যে ২০টি জেলায় সব ধরণের মাছ ধরার ক্ষেত্রে এবং বাকি ১৮টি জেলায় শুধুমাত্র ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেই সাথে সারাদেশে শুধুমাত্র ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি, মজুদ, বাজারজাত ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের অংশ হিসেবে এবারে এক হাজার ৮৯২টি ভ্রাম্যমান আদালত ও ১৫ হাজার ৩৮৮টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ৮৮৪ লাখ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইলিশ ধরা বন্ধে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে।
এবার প্রায় ছয় লাখ টন ইলিশ ধরার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অভিযান সফল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ইলিশ আহরণের আশা করছেন মৎস্য অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী। ইলিশ প্রজননের অনুকূল পরিবেশ ও সিত্রাংয়ের প্রভাব: ইলিশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিনের নিষেধাজ্ঞা তার ওপর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ইলিশ মাছের প্রজননে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে এই মৌসুমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, সাধারণত আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ও পুরো অক্টোবর মাস জুড়েই ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলে।
সেইসাথে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা ইলিশ প্রজননের অনুকূল সময়। এ কারণে চাঁদের এই অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞার তারিখগুলো নির্ধারিত হয়ে থাকে। এবারে ১০ অক্টোবর পূর্ণিমা ও ২৫ অক্টোবর আমাবস্যা হয়েছে। ফলে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার মোক্ষম সময় পেয়েছে।
আনিসুর রহমান বলেন, ইলিশের প্রজননে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় নিলেও এই নিষেধাজ্ঞা ২২ দিন রাখা হয় যেন ইলিশ প্রজননের জন্য সাগর থেকে মোহনা বেয়ে তার অনুকূল পরিবেশ পর্যন্ত বিনা বাধায় আসতে পারে। এ সময় ইলিশ ৭২-৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশি পথ, স্রোতের বিপরীতে চলার সক্ষমতা রাখে। সেই হিসেবে লোনা পানি থেকে মোহনা বেয়ে মিঠাপানিতে আসতে তাদের দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। এজন্য আমাবস্যা ও পূর্ণিমার সামনে পেছনে দুই/তিন দিন সময় রেখে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হয়। ইলিশ মাছ ধরার সবচেয়ে উপযোগী পরিবেশ হল গভীর স্রোতস্বিনী মিঠা পানি, তাপমাত্রা, সেইসাথে পানিতে কিছু গুণাগুণ থাকতে হয়।
প্রথমত পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের হার যেন কোনো অবস্থায় চারের নিচে না নামে। বাংলাদেশের নদী ও মোহনায় অক্সিজেনের এই মাত্রা মোটামুটি ভারসাম্যে থাকায় এখনো ইলিশ আসতে পারছে বলে জানান রহমান। তবে নদী দূষণ ও নাব্যতা সঙ্কটের ফলে অক্সিজেনের মাত্রা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যা ইলিশ প্রজননে পরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে এবং ইলিশ বাংলাদেশের বাইরে বিকল্প নদী খুঁজে নিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া ডিম পাড়ার জন্য ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ইলিশের জন্য বেশ অনুকূল। বাংলাদেশের জলসীমায় এই তাপমাত্রা বজায় থাকা ইলিশ উৎপাদনের অন্যতম বড় কারণ। এছাড়া পানির পিএইচ এর মাত্রা আট বা তার উপরে থাকারও প্রয়োজন পড়ে। পিএইচ পানিতে থাকা অম্ল ও এলকালাইনের ভারসাম্যের পরিমাপক। পিএইচ-এর ভারসাম্যের ওপর জলজ প্রাণীর স্বাস্থ্য নির্ভর করে। সাধারণত ছয় দশমিক পাঁচ থেকে আট দশমিক পাঁচ পিএইচ-এর পানিকে নিউট্রাল বা ভারসাম্যপূর্ণ পিএইচ লেভেলের পানি বলা হয়। তাছাড়া ইলিশের প্রজননে ঘূর্ণিঝড়ের একটি ইতিবাচক প্রভাব আছে বলে জানান আনিসুর রহমান। কারণ এই সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস, নদীতে প্রচুর স্রোত ও পানির উচ্চতা বেড়ে যায় ফলে পানিতে থাকা দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণও বাড়ে। সেইসাথে পানির অন্য উপাদানগুলো ভারসাম্যে থাকে। ফলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার অনুকূল পরিবেশ পায়। মা ইলিশ বেশি বেশি ডিম পাড়ে। এজন্য উৎপাদনও বেড়ে যায়।
গত ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং যে সময় আঘাত হানে ওই রাতেই ছিল অমাবস্যা। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলায় টানা-বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়ার, স্রোত ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানির গুণগত মান উন্নত হয়। এতে ইলিশের ডিম পাড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যার কারণে ইলিশ প্রচুর ডিম ছেড়েছে বলে আশা করছেন আনিসুর রহমান। তারমধ্যে ওই সময়ে নদী ও মোহনায় কোনো জেলে ও নৌকা না থাকায় নির্ঝঞ্জাটে ডিম পেরেছে মা ইলিশগুলো। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এবার ইলিশ ছাড়াও অন্য মাছও প্রজনন ও ডিম পাড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে জানান আনিসুর রহমান। তবে একটি মা ইলিশের প্রজনন, ডিম পাড়া, বাচ্চা ফোটানো এবং সেই মাছটির পরিণত হওয়া-এই পুরো প্রক্রিয়ায় সাত থেকে আট মাস সময় লাগে। তাই এই সময়ে বাচ্চা ইলিশ রক্ষা করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারণত ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বেরোলে ইলিশ ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লার্ভা অবস্থায় থাকে। এরপর এরা বড় হতে থাকে। পানিতে বিচরণ করে বিভিন্ন খাবার ও প্ল্যাঙ্কটন খেতে শুরু করে। অনেক সময় জেলেদের ফেলা মিহি জাল বা কাঁথা জালে ছোট বড় অনেক মাছের সাথে ধরা পড়ে যায় এই ছোট ইলিশ মাছগুলো। তাই এসব জালের ব্যবহার আটকাতেও নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জালের নেটগুলো কতো বড় হবে সেটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। যেন বাচ্চা ইলিশের মতো অপরিণত মাছের পোনাগুলো ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে পারে। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com