বাংলাদেশ সফরের প্রথম দিনেই সপরিবারে রিকশায় করে পুরান ঢাকা ঘুরেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা এডওয়ার্ড এম কেনেডি জুনিয়র। গতকাল রোববার (৩০ অক্টোবর) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে কেনেডি পরিবারের সদস্যদের পুরান ঢাকায় রিকশায় ঘুরার ছবি শেয়ার করেছে। এডওয়ার্ড এম কেনেডি জুনিয়র ও তার পরিবারকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, সফরের প্রথম দিনেই তারা রিকশায় করে পুরান ঢাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি প্রত্যক্ষ করেন এবং ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় যাত্রাবিরতি নেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আট দিনের সফরে শনিবার (২৯ অক্টোবর) কেনেডি পরিবারের সদস্যরা ঢাকা আসেন। এ সফরে তারা দেশের বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করবেন।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানায়, ২৯ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর কেনেডি পরিবারের সদস্যরা ঢাকা সফর করবেন।কেনেডি জুনিয়রের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন তার স্ত্রী ড. ক্যাথরিন কিকি কেনেডি, মেয়ে ড. কাইলি কেনেডি, ছেলে টেডি কেনেডি, ভাতিজি গ্রেস কেনেডি অ্যালেন এবং ভাতিজা ম্যাক্স অ্যালেন।
বাংলাদেশ সফরে এম কেনেডি জুনিয়র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যুদ্ধবন্ধু কেনেডি পরিবারের সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন একটি ভোজের আয়োজন করছে, তারা সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পিকারস প্রোগ্রামের পৃষ্ঠপোষকতায় জুনিয়র এডওয়ার্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দেবেন। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের একজন সমর্থক হিসেবে তাঁর পিতার ভূমিকার কথা তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ সাবেক সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির রোপণ করা বটগাছটিও পরিদর্শন করবেন তিনি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা এ আইনজীবী ঢাকার এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড দ্য আর্টসে প্রতিবন্ধী অধিকারের ওপরও একটি বক্তৃতা দেবেন। বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন কেনেডি পরিবারের সদস্যরা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জোরালো সমর্থন ছিল সিনেটর টেড কেনেডি হিসেবে পরিচিত এডওয়ার্ড এম কেনেডির। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে সফরে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পাকিস্তানি বাহিনী যে সাম্প্রতিক মানব ইতিহাসের ভয়াবহ নৃশংসতা চালিয়েছিল, সে সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলেন।
পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে মার্কিন সিনেটে ‘দক্ষিণ এশিয়ার সংকট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনী আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর মানবিক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে পরিকল্পিতভাবে চরম আতঙ্কের বিস্তার ঘটিয়েছিল এবং গণহত্যা চালিয়েছিল, যার প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার দুই মাস পরই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।