দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমছে বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে এ দেশের বিরোধী দলগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে। বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকার নানা প্রকার দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তাই বিরোধী দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় একে অপরের সাথে সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। নির্বাচন যত সামনে আসবে তাদের সখ্যতা তত বৃদ্ধি পাবে। গত রোববার দেশের একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা যায়।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দল এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দু’টি দলের সমন্বয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে নির্বাচনের পরে ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি দল ছাড়া এসব জোটের দলগুলোর মধ্যে তেমন সক্ষতা দেখা যায়নি। এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নির্বাচনের পর গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দু’জন সংসদ সদস্য বিএনপির মতামত উপেক্ষা করে জাতীয় সংসদে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই জোটের আর কোনো কার্যকারিতা দেখা যায়নি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনো পর্যন্ত বিএনপি নতুন কোনো জোট গঠন করেনি। তবে ‘গণতন্ত্র ম ’ ও ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ নামে বামদলগুলো দুটো জোট গঠন করেছে। এসব জোট জোটগতভাবে যেমন একে অপরের সাথে আলোচনা করছে, ঠিক তেমনি দলগতভাবেও একে অপরের সাথে আলোচনা করছে। এমনকি বিভিন্ন আলোচনা সভায় এসব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের একই মে বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে। এসব বক্তব্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ব্যাপারে তারা ঐকমত্য পোষণ করছে। আবার অনেক দলের শীর্ষ নেতারা সম্প্রতি বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।
ইতোমধ্যে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশসহ নিয়মিত কর্মসূচি দিচ্ছে। এসব কর্মসূচি সফল হচ্ছে বলে দাবি করছে দলটি। পাশাপাশি বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দলের সমর্থন পাচ্ছে দলটি। সবমিলিয়ে বলা চলে বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বড় রাজনৈতিক জোট এখন পর্যন্ত তৈরি না হলেও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সখ্যতা বেড়েছে। সামনে সরকারবিরোধী কার্যকর আন্দোলনের জন্য এটি একটি ভালো দিক বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয় জানতে চাইলে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ও জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করছে। তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছে। তারা মনে করছে বিএনপির দাবিগুলো যৌক্তিক। তাই তারা বিএনপির দাবিগুলোকে সমর্থন করছে। যুগপৎ আন্দোলনের জন্য আলোচনা করছে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে এ দেশের বিরোধী দলগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে। বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকার নানা প্রকার দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তাই আমি মনে করি বিরোধী দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় একে অপরের সাথে সখ্যতা বাড়াচ্ছে। আমার মনে হয় নির্বাচন যত সামনে আসবে তাদের সখ্যতা তত বৃদ্ধি পাবে। তারা সম্মিলিতভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ দেশে কখন কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সখ্যতা হয় আবার বৈরিতা হয় তা বলা মুশকিল। নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। নির্বাচনের আগে দেখা যাবে কাদের সখ্যতা কার্যকর আছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা চাচ্ছি সব বিরোধী দলের সাথে সখ্যতা বৃদ্ধি পাক। আমরা চেষ্টা করছি। আমরা বিএনপির সাথে আলোচনা করব। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও আলোচনা করব। যেন ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে মোকাবেলা করা যায়। এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল ড. অলি আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মধ্যে ১৩টি দল ছাড়া বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের এক ও অভিন্ন দাবি। সেই দাবিগুলো হলো- এই সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এ ছাড়া দেশের যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় তা থেকে বাঁচতে আমরা সবাই ঐকমত্য। তাই আমাদের এসব দাবির সাথে যারা একমত পোষণ করে তাদের সাথে সক্ষ্যতা তো অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে।