জেলা শহর থেকে শুরু করে জেলার প্রান্তিক জনপদের বাড়ির চালে আবাদি জমিতে চাল কুমড়া নজর কাড়ছে। বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ এ কুমড়া। গ্রাম বাংলায় ঘরের চালে গাছ উঠানো হয় বলে চালকুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে, মাচায়ও চাষ করা হয়। কচি ফল (জালি) তরকারি হিসেবে এবং পরিপক্ব ফল মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ সবজি বা ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম: (ইবহরহপধংধ যরংঢ়রফধ)
মেহেরপুরে কুমড়ার বড়ি হিসেবে চাল কুমড়ার ব্যবহার বেশি হলেও সবজি হিসেবে আমাদের দেশে চাল কুমড়ার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে চাল কুমড়া শুধু চালে নয়, জমিতে মাচায় চাষ করলেও ফলন বেশি হয়। সবুজ কচি চাল কুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু চাল কুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। আর চুনের মত সাদা চাল কুমড়া দিয়ে বড়ি, মোরব্বা ও হালুয়া তৈরি করা যায়। এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাঠে মাঠে কুমড়ার চাষ হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদিত বিভিন্ন কোম্পানী এখন চালকুমড়া দিয়ে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করছে। ফলে চাল কুমড়ার চাহিদা বাড়ছে।
বাংলাদেশে চাল কুমড়ার কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি চালকুমড়া-১ নামের জাতটি বাংলাদেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়। আমাদের দেশে একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন বারি চাল কুমড়া-১ যা বার মাসই চাষ করা যায়। এছাড়াও রয়েছে হাইব্রীড চালকুমড়া সুফলা-১, হাইব্রীড চালকুমড়া বাসন্তী-নিরালা, হাইব্রীড চালকুমড়া বিজয় (উফশী-বিজয়),হাইব্রীড চালকুমড়া সোনালী এফ-১, হাইব্রীড চালকুমড়া মাধবী।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সজিব উদ্দীন স্বাধীন জানান- চাল কুমড়া একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা ও ফাইবার রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে- চাল কুমড়া‘য় এন্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে পেট এবং অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন বা আলসার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কুমড়া পুষ্টিকর সবজি। চাল কুমড়াই বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম আছে।
চাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা ফুসফুসের জন্য উপকারী। চাল কুমড়ার বীজ কৃমি নাশ করে থাকে। এবং এর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ ভালো হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাল কুমড়া চাষ করা যায়। তবে চাল কুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি উত্তম।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমার জানান, চাল কুমড়া বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ হলেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে। চালকুমড়া চাষের কোন পরিসংখ্যান কৃষি বিভাগে নেই বলে জানান। পাকা একেকটি কুমড়া ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। বড়ি দেবার জন্যই মূলত কুমড়ার চাহিদা ছিলো এতদিন। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানী জ্যাম, জেলি, মুরুব্বা তৈরি করছেন কুমড়া দিয়ে। পাউরুটি বানাতেও এ কুমড়া ব্যবহৃত হচেছ। ব্যাপক চাহিদার কারণেই এ কুমড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।