কাতার কেন বিশ্বকাপের ভেন্যু পেল এ নিয়ে গাত্রদাহের শেষ নেই পশ্চিমাদের। তাদের মিডিয়াও এই একই সুরে কথা বলছে। গত শনিবার ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে ফিফা সভাপতি জিওভান্নি ইনফান্তিনোর সংবাদ সম্মেনের প্রায় পুরোটা সময় জড়েই কাতারের নানা সিদ্ধান্তের বিপক্ষে সাদা চামড়ার মিডিয়াকর্মীদের প্রশ্ন। সাথে যুক্ত হয় ইরানের চলমান হিজাব ইস্যুতে সরকার বিরোধীদের অন্দোলন বিষয়ও। ফিফা সভাপতিও কম যাননি। তিনি এই সমালোচকদের পাল্টা জবাবও ছিল ভদ্রোচিত কঠোর ভাষায়। প্রতি বিশ্বকাপের গ্যালারিতে দেদারছে অ্যালকোহল (বিয়ার) পান করে ফুটবল ভক্তরা। কিন্তু এবার সেই বিয়ার পান করার কোনো সুযোগই নেই বিশ্বকাপে আসা দর্শকদের। শুক্রবার কাতার কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ করে খেলার সময় মাঠে এই পানীয় গলায় ঢুকানোটা। এই প্রসঙ্গও উঠে আসে শনিবার মেইন মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। ইনফান্তিনো সোজা জানিয়ে দেন, ‘এই বিয়ার নিষিদ্ধ করাটা কাতার এবং ফিফার যৌথ সিদ্ধান্তের ফসল। এটা করা হয়েছে সমর্থকদের জীবন বাঁচাতেই। কাতার বিশ্বকাপে দিনে চার ম্যাচ। একজন দর্শক ইচ্ছে করলে দিনে একাধিক খেলাই মাঠে বসে দেখতে পারবে। যে সুযোগ করে দিয়েছে কাতার কর্তৃপক্ষ। এটাই অন্য বিশ্বকাপের চেয়ে এবারের বিশ্বকাপের বিশেষত্ব।’
তিনি যুক্তি দাঁড় করান, ‘দেখুন এবারের বিশ্বকাপে দিনে চারটি ম্যাচ। ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮টি স্টেডিয়ামের অবস্থান। এক ম্যাচ শেষ করেই দর্শকরা অন্য স্টেডিয়ামে ছুটতে পারবে। কিন্তু গ্যালারিতে বিয়ার পান করলে এবং তা অত্যাধিক পরিমাণে হলে তাদের পক্ষে এক স্থান থেকে অন্যত্র গিয়ে খেলা দেখা কঠিনই হয়ে যাবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুরু হয়ে যেতে পারে শরীরে। তাই এই সমর্থকদের জীবন বাঁচাতেই স্টেডিয়ামে বিয়ান পান নিষিদ্ধ করা।’ ফিফা সভাপতি ইউরোপিয়ান এবং আটলান্টিকের পশ্চিমপাড়ের দেশগুলোর সমালোচকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলেন, ‘পর্তুগাল, স্পেন এবং স্কটল্যান্ডেও স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিয়ার। তারা তো নিশ্চয়ই আমাদের চেয়েও বিচক্ষণ।’
কাতার বিশ্বকাপ স্থাপনা নির্মাণে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন, তাদের পারিশ্রমিক কম দেয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গও উঠে আসে। ইনফান্তিতোর জবাব, ইউরোপেও তো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। সেদিকে তাকান।’
এরপরই ফিফা সভাপতি ইউরোপ বিরোধী কিনা- এই প্রশ্ন করা হলে তার পাল্টা জবাব, ‘আমিতো ইউরোপবিরোধী নই। আমি একজন ইউরোপিয়ান। সে সাথে আমি সারা বিশ্বের নাগরিক। আমি একইসাথে ইতালিয়ান। থাকি সুইজারল্যান্ডে। তাই আমি সুইসও। আবার আমি একইসাথে আরব এবং কাতারিও।’ ফিফা সভাপতি বিনয়ের সুরে বলেন, ‘প্রয়োজনে আমার সমালোচনা করুন। আমি ফিফা সভাপতি। আমি এর দায়িত্বে। কিন্তু কাতার এবং ফুটবলের সমালোচনা করবেন না। দূরে থাকুন কোচ এবং ফুটবলারদের সমালোচনা করা থেকেও। ফুটবলারদের খেলতে দিন। তাদের খেলা উপভোগ করতে দিন।’ ফিফা সভাপতি পক্ষ নেন ইরানেরও। জানান, আমি ইরানে গিয়েছি। ইরানের সব লোক তো খারাপ নয়। ইরানের সাথে ইংল্যান্ডের ম্যাচ। বলুনতো ইংল্যান্ডের সব লোক কি ভালো। সব খানেই ভালো-খারাপ আছে।