ক্ষুদে ইলেকট্রনিক্স মেকানিক হিসেবে জীবন যুদ্ধ শুরু করলেও এখন বারি-২ জাতের কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনি গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী কৃষি উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন উজ্জল। গাছে গাছে হলুদ বর্ণ ধারণ করা কমলা গুলো এক নজর দেখার জন্য প্রতিবেশীরা ছাড়াও দূর থেকেও আসছেন অনেকেই।
কমলার বাগান ঘুরে আত্মপ্রত্যয়ী ইমরান হোসেন উজ্জলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা ইমরান হোসেন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ইলেকট্রনিক্স মেকানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকাতে ওই কাজ শুরু করেন। সেখানে ছাদ বাগানে নানা জাতের ফলের চাষ করতে থাকেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রাদূর্ভাব ও প্রযুক্তিগত নতুন নতুন উদ্ভাবন হওয়ায় ঢাকাতে বসবাস চ্যালেঞ্জ মনে করে বাড়িতে ফিরে আসেন। ছোট বেলার স্বপ্ন ফলবাগান করবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে আত্মনিয়োগ করেন। ঢাকাতে ছাদ বাগানে তৈরি করা কমলার মাতৃগাছ থেকে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের কিছু জমির সঙ্গে পাশের একটুকরা জমি পত্তন নেন। মোট জমির পরিমান ৩৩ শতাংশ। সেখানে ১০০ টি বারি-২ জাতের কমলার চারা রোপণ করেন ২০২০ সালের ১৮ জুন। নিবিড় পরিচর্যা ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় এবারই প্রথম গাছে গাছে কমলা ধরতে শুরু করে। গাছে গাছে দোল খাচ্ছে কমলা গুলো। বর্তমানে কমলা গুলো হলুদ বর্ণ ধারন করায় যেন কমলার সঙ্গে ইমরান হোসেন উজ্জলের মনও দোল খাচ্ছে আনন্দে। এখন সফল একজন কমলা চাষির খাতায় নাম উঠেছে ইমরান হোসেন উজ্জলের। এ কমলা বাগান করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এবারের গাছে থাকা প্রথম পর্যায়ে কমলা বিক্রি করে তেমন লাভ না হলেও বাগানে তৈরি করা কমলার চারা বিক্রি হবে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা এমন আশা প্রকাশ করেন ইমরান হোসেন উজ্জল। প্রতিদিন প্রতিবেশীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক লোকজন আসছেন একনজর দেখার জন্য। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে আসা সোহাগ হোসেন, নওগাঁ জেলার আনিসুর রহমান, রাজশাহী থেকে সোহরাব হোসেন কমলার বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানালেন। ইতোমধ্যে ১৫০ টাকা কেজি দামে ২০ কেজি কমলা বিক্রি করেছেন। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাইকারী কমলা ক্রেতারা জমি থেকে কমলা নিয়ে যাচ্ছেন। বাগানে থাকা আরও ৬ মণ ( ২৪০ কেজি) কমলা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন কৃষি আত্মপ্রত্যয়ী ইমরান হোসেন উজ্জল। ভিটামিন ’সি’ সমৃদ্ধ ও পুষ্টি গুণে ভরপুর কমলা বিশেষ করে শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে লাবণ্য ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শীতকাল আসলে অপেক্ষা করতে হতো বাহির দেশ থেকে কবে কমলা আসবে। এখন স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক ভাবে কমলার চাষ হওয়ায় ভিটামিন ’সি’ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন এ অ লের মানুষ বলে জানান, আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোকসেদ আলী।
আক্কেলপুর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: ইমরান হোসেন জানান, বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে খ্যাত আক্কেলপুরের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনি গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী যুবক ইমরান হোসেন কমলা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। একটা নতুন মাত্রাও সংযোজন করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ফলবাগান সৃজন কর্মসূচির আওতায় কমলার চারা প্রদান, সার, কীটনাশক ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ।