মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে ৯ শতক জায়গায় ২০০১ সালে নার্সারি শুরু করেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইকবাল ফারুক (৫১)। প্রথমে অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করলেও কঠোর পরিশ্রমে এগিয়ে যান। সেই থেকে সফলতার গল্পের শুরু। পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সততার ওপর ভর করে তিনি এখন প্রতিষ্ঠিত নার্সারি ব্যবসায়ী। নাম দিয়েছেন ‘বনরূপা নার্সারি’। এখন তার মূলধন প্রায় কোটি টাকা। বর্তমানে ২ একর জায়গায় নার্সারি করেছেন। ভবিষ্যতে আরও ৩ একর জায়গাজুড়ে নার্সারি করার পরিকল্পনা আছে। ইকবাল ফারুক মিরসরাই সদর ইউনিয়নের কিসমত জাফরাবাদ গ্রামের মৃত মজিবুল হকের ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে নার্সারি পেশাকে আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। প্রথমে কিছু বনজ ও ফলদ চারা দিয়ে নার্সারি শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পরিধি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করেন। এ ব্যবসায় সফলতা পাওয়ায় এখন তিনি কোটিপতি। ফারুকের নার্সারি ব্যবসার সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক এ পেশায় অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
ইকবাল ফারুক বলেন, ‘বর্তমানে ২ একর জমিতে নার্সারি আছে। এখানে প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ওষধি চারা আছে। বিভিন্ন জাতের বনজ চারা ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া, শরিফা, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বরই, কামরাঙা, মিষ্টি তেতুল, চালতা, লিচু, বেল, লটকনের চারা আছে। আমের জাতের মধ্যে হাঁড়িভাঙা, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর, গুটি, ফজলি, গৌরমতি, কাঠিমণ, বারি-৪, বেনানা ম্যাঙ্গো, চিয়াংমাই, চাকাপাতসহ প্রায় ৩০ জাতের চারা আছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাসনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, বেলি, গন্ধরাজ, জবা, পাতাবাহার, ঝাউসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা আছে। এ ছাড়া এখানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ওষধি গাছও। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, মিরসরাই উপজেলা ছাড়া সীতাকুন্ডু, ফটিকছড়ি, রামগড়, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ এসে চারা সংগ্রহ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নার্সারি আমার ধ্যান-জ্ঞান, জীবনের অংশ। ২০০১ সালে মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নার্সারি শুরু করেছি। আমার কাছে এখন প্রায় কোটি টাকা পুঁজি আছে। এ ছাড়া আমি আরেকটি জায়গায় বিশাল পরিসরে নার্সারি করার পরিকল্পনা নিয়েছি। নার্সারি গড়ে তোলার পর শুরুতে কেউ কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও পরে অনেকেই বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন। নার্সারি করে ৬০ লাখ টাকা খরচ করে একটি বাড়ি করেছি। আমার নার্সারিতে সারাবছর ৬-৭ জন শ্রমিক কাজ করে। মৌসুমে ২২-২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।’
ইকবাল ফারুক বলেন, ‘আমার নার্সারি থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান চারা নিয়েছে। এ ছাড়া গতবছর স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল ১ লাখ ১০ হাজার চারা নিয়েছেন। চলতি বছর বেচাকেনা একেবারে কম। করোনার পর ১ বছর ভালো বিক্রি করলেও এ বছর কম বিক্রি হচ্ছে।’
মাজহরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ইকবাল ফারুক অনেক পরিশ্রমী ও উদ্যোগী মানুষ। তিনি ক্ষুদ্র পরিসর থেকে আজ অনেক বড় নার্সারি গড়ে তুলেছেন। তিনি আরও এগিয়ে যাবেন বলে আমি আশাবাদী।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, ‘নার্সারি লাভজনক ব্যবসা। অনেক বেকার নার্সারি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মিরসরাই উপজেলায়ও দিন দিন নার্সারির সংখ্যা বাড়ছে। যারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চান, আমরা তাদের সহযোগিতা দিয়ে থাকি।’