কয়েক মাস ধরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দাম ভোগাচ্ছে নি¤œ আয়ের মানুষদের। তেল, চাল, ডাল, আটা, ময়দা বাড়তি দামের সঙ্গে এবার নতুন করে দাম বেড়েছে গুঁড়া দুধ ও পেঁয়াজের। কোম্পানি ভেদে গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট আরও একটু বেড়ে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও গুঁড়া দুধের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে। টিসিবি বাজার থেকে ডানো, ডিপ্লোমা, ফ্রেশ এবং মার্কস গুঁড়া দুধের তথ্য সংগ্রহ করে। গত এক সপ্তাহে এই চার ধরনের গুঁড়া দুধের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছে টিসিবি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গুঁড়া দুধের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে কিছু কিছু গুঁড়া দুধ ৭৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। আগের মতোই এখনো সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডানো। ব্যবসায়ীরা ডানো দুধের কেজি বিক্রি করছেন ৮৬০ থেকে ৯০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই দুধের কেজি ছিল ৮৩০ থেকে ৮৫০ টাকা। এছাড়া ডিপ্লোমা দুধের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৩০ থেকে ৮৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮২০ থেকে ৮৪০ টাকা। ফ্রেশ দুধের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮২০ থেকে ৮৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা। আর মার্কস দুধের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
এদিকে টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর ডানো, ডিপ্লোমা, ফ্রেশ এবং মার্কস গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে। অবশ্য টিসিবির দামের তথ্য এবং ব্যবসায়ীদের দেওয়া দামের তথ্যের মধ্যে কিছুটা ব্যবধান পাওয়া গেছে। টিসিবির উল্লেখ করা দামের তুলনায় বাজারে একটু বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে গুঁড়া দুধ। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দাম বেড়ে এখনো ডানো গুঁড়া দুধের কেজি ৮৪০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৮১০ থেকে ৮৫০ টাকা। ডিপ্লোমা ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকা। ফ্রেশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা। মার্কস ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭৯০ টাকা। গুঁড়া দুধের দামের বিষয়ে খিলগাঁও তালতলার ব্যবসায়ী ফয়সাল হোসেন বলেন, কয়েকদিন বাজারে গুঁড়া দুধের সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। এখন মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে সব কোম্পানিই দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। কেজিতে গুঁড়া দুধের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, প্রায় এক মাস ধরে দফায় দফায় চাল, আটা, ময়দার দাম বেড়েছে। নতুন করে এখন গুঁড়া দুধের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সব থেকে বেশি বেড়েছে ডানো দুধের দাম। ডানো দুধের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। পেঁয়াজের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, মাঝে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। দুদিন পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা ছিল।
এদিকে আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া চাল, আটার দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বোতলের সয়াবিন তেলের দাম। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম এক দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা, যা আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা। আর মাঝারি মানের চালের দাম দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। খোলা আটার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। এতে এক কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৩ টাকা, যা আগে ছিল ৫৮ থেকে ৬৩ টাকা। আর প্যাকেট আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৯০ থেকে ৯২৫ টাকা, যা আগে ছিল ৮৭৫ থেকে ৯২৫ টাকা। লুজ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, যা আগে ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে রিকশা চালক মো. ঝন্টু বলেন, বাজারে সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। ৫০ টাকার নিচে এক কেজি চাল কেনা যায় না। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। আটার কেজি ৬০ টাকার ওপরে। আমরা কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্ট কর।
খিলগাঁও তালতলা বাজারে দুধ কিনতে আসা আশরাফ আলী বলেন, বাসার জন্য গুঁড়া দুধ কিনতে এসে দেখি কেজিতে ৫০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। এভাবে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে। মাসে যে বেতন পায়, তাতে বর্তমানে বেশ কষ্ট করেই সংসার চালাতে হয়। মাস শেষে কোনো টাকা স য় থাকে না। তিনি বলেন, বছর শেষ হতে যাচ্ছে। সামনে হয় তো বাসা ভাড়াও বাড়বে। কিন্তু বেতন বাড়বে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাসা ভাড়া এবং চাল, ডাল, তেল, আটার এখন যে দাম তাতে ঢাকায় টিকে থাকায় কষ্ট কর হয়ে গেছে।