সরকার ঘোষিত আইনকে তোয়াক্কা না করে বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় একটি সিন্ডিকেট স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বিচারে পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিক্রির করে যাচ্ছে। ফলে এক দিকে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যে দেখা দিয়েছে হুমকি মুখে। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে টংকাবতী বনবিভাগের পূর্বপাশে মাটি খেকো কামাল ও আব্দুল আলম সহ বেশ কিছু প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পাহাড় ও টিলা কাটার একটি সিন্ডিকেট চক্র স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড় ও টিলা কাটা। রাত-দিন অন্তত ১০/১৫ টি ডেম্পার গাড়িতে করে পাহাড় ও টিলার মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট চক্রটি। প্রায় ৪৫ ফুট ধারণকৃত প্রতি গাড়ি পাহাড়ি মাটি ১৩০০-১৫০০ টাকা হারে বিক্রি করে রাতারাতি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চক্রটি এ পর্যন্ত বেশ কিছু পাহাড় ও টিলা কেটে সাবাড় করতেছে। বর্তমানে পাহাড়টি অর্ধেক অংশ ইতিমধ্যে কাটা শেষ হয়েছে। বাকিটাও নিশ্চিহ্ন হবার পথে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ এর (খ) স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা-সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। কিন্তু এই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড় ও টিলা কাটার মহোৎসব। স্থানীয়দের অভিযোগ, আমরা গ্রামের কেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আমাদের এই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে মাটি খেকো আব্দুল আলম (প্রকাশ আলম কোম্পানি) ও কামাল সহ একটি সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রতিনিয়ত এসব অবৈধ ভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও আলম কোম্পানি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বনালী গর্জন, সেগুন গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে লক্ষ লক্ষ টাকার ফার্নিচারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পেশী শক্তি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দিন-রাত পাহাড় কাটার কার্যকালাপ চালিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে মাটি খেকো কামাল ও আব্দুল আলম কোম্পানির সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদীপ জানিয়েছেন, পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয়ে আমি অবগত না। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে হবে বলেও জানান তিনি। টংকাবতী বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, যেখানে পাহাড় ও টিলা কাটতেছে ওই জায়গা গুলো আমাদের না। তবে কিছুদিন আগে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে গিয়েছিলো। এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরোজ জানান, পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।