১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান ৯ ডিসেম্বর নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে। জাতি আজ এমন এক সময় দিবসটি পালন করতে যাচ্ছে যখন দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। মানুষের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিরোধী মতের কন্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনকে ভূলুন্ঠিত করা হয়েছে। মানুষের জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর আজ কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশে প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ এবং মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে।
সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর বিশ্ববরেণ্য মোফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হেসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সাবেক এমপি আব্দুল খালেক ম-লকে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রেখেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ বিরোধী দলীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর চিকিৎসার মৌলিক অধিকার থেকে বি ত করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাস-সহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী জানুয়ারি ২০২২ থেকে অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত গত ১০ মাসে দেশে নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিন হাজার ৬৭ জন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৩০ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৯ জনকে। আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে বিচারবহির্ভূতভাবে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। ৯ মাসে ৩৮৭টি রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৮ জন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৪০০ জনের মতো।
এ সময় দুটি পৃথক ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের চারটি ঘরসহ আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি, নির্যাতন ও ধাওয়ায় নিহত হন ১২ বাংলাদেশী।
গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৬৬ জন সাংবাদিক। আসকের তথ্য মতে, আরও ১৭৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এ তথ্যগুলো দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা হবে আরো অনেক বেশি।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এই দিনে আটক সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটাধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।”