শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবীদের বেছে বেছে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে গোটা জাতি এদিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। এদিকে বিজয় অর্জনের প্রাক্কালে এদিন মুক্তিযুদ্ধের যৌথ কমান্ড মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে রাজধানী ঢাকা। দখলদার বাহিনীর সব কয়টি ডিভিশন ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
উত্তর সেক্টরের ময়মনসিংহ ব্রিগেড ঢাকার পথে পশ্চাদপসারণ করলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকা পৌঁছাতে পারেনি। তারা জয়দেবপুরে আটকে পড়ে। মিত্রবাহিনীর অবস্থানের কারণে দখলদার বাহিনীর উত্তর-পশ্চিম সেক্টরের ১৬তম ডিভিশন কিংবা পশ্চিম সেক্টরের ৯ম ডিভিশন কারো পক্ষেই পশ্চাদপসারণ করেও ঢাকার ডিফেন্সে এগিয়ে আসার কোন পথ ছিল না। তাদের প্রতিটি ডিভিশন ইতোমধ্যে যৌথবাহিনীর আক্রমণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ইস্টার্ন কমান্ডের কিছু সৈন্য ঢাকায় আসতে পারলেও তাদের অধিকাংশ সৈন্য ইতোমধ্যে যৌথবাহিনীর হাতে বন্দী হয়। বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে একের পর এক পরাজয়ের সংবাদে দখলদারবাহিনী তখন দিশেহারা ও পরাজয়ের আশঙ্কায় ভীত এক বাহিনী। এদিন দখলদার বাহিনী যখন ঢাকায় নির্দয়ভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করছে, ঠিক তখন যৌথবাহিনী ঢাকার উপকণ্ঠে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে পৌঁছে গেছে। পশ্চিম ও পশ্চিম-উত্তর দিক থেকে ঢাকাকে ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনী তৈরি করে কালিয়াকৈর-সাভার-মিরপুর-ঢাকা বেষ্টনী। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধারা ১৪ ডিসেম্বর রাতে পৌঁছে যায় ঢাকার বাসাবোতে এবং দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি দল ডেমরায়।
এদিন বিভিন্ন রণাঙ্গনে ক্রমাগত উড়তে থাকে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। শত্রুমুক্ত হয় ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের পুবাইল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বৈদ্যের বাজার, বগুড়া জেলার শেরপুর ও শিবগঞ্জ থানাসহ জেলা শহরের একাংশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জ এলাকা,আক্কেলপুর ও পাঁচবিবিসহ জয়পুরহাট জেলা, যশোরের কেশবপুর, রংপুরের মিঠাপুকুর, চট্টগ্রামের বান্দরবান, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া ও কুমিড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল প্রভৃতি এলাকা। এদিনই সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান পূর্বা লীয় দখলদার বাহিনী প্রধান নিয়াজী ও গভর্নর ডা. মালিকের কাছে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে এক তারবার্তা পাঠালে চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়ে দখলদার বাহিনীর মনোবল।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। এদিন সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। দিনটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানালয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র কর্মসূচি
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর দিনব্যাপী নিন্মোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে: কর্মসূচি: আজ১৪ ডিসেম্বর বুধবার ভোরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮ টায়: কালো ব্যাজ ধারণ ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতি সৌধে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় এবং মহানগর, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিএনপি ও স্ব-স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন। বেলা ৩ টায়: জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আলোচনা সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ বক্তব্য রাখবেন।
১৪ ডিসেম্বর জাতির ইতিহাসের একটি বেদনা দায়ক ও শোকাবহ দিন। প্রতি বছর এই দিবসটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই পাকবাহিনীর প্রধান শিকার ছিলেন দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ। তারা মনে করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এই দেশ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রূদ্ধ করে দেয়া যাবে এবং স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
আজকে গণতন্ত্রহীন অমানবিক ও অস্বস্থিকর পরিস্থিতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, যার আদর্শ হবে গণতন্ত্র। সেই স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সার্বজনীন অধিকার, সেটি সমুন্নত রাখতে আমাদের মিলিত শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীর প্রতি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচি সফল করার আহবান জানানো হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com