দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী নেতাদের চেয়ে ২০২২ সাল ভালোভাবে কাটছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। একাধিক বৈশ্বিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির নেতা হিসেবে বছর শেষ করছেন। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন ৭ শতাংশের কাছাকাছি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ইউরোপকে জ্বালানি সংকটে ফেলেছে এবং পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এর বিপরীতে ভারত সস্তায় রাশিয়ার তেল কিনছে এবং বিশ্বে মোদীর অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের সমর্থন পেতে তোড়জোড় করে তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ সমাধানে নিরপেক্ষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে সফল হয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি যেমন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান একই সঙ্গে রাশিয়া-বিরোধী জোটে যোগদানের জন্য পশ্চিমা অনুরোধ প্রতিহত করেন। নরেন্দ্র মোদীর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২০২৩ সালে সমাদৃত হওয়া অনেক ভারতীয়র জন্য ভালো খবর নাও হতে পারেন। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং পশ্চিমা নেতাদের সম্পর্কের ভারসাম্য এরই মধ্যে তার সরকারের সমালোচনাকে সীমিত করেছে।
মোদীর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ওপর থেকে আরও একবার দৃষ্টি সরে যাবে। এই বিষয়টি মোদীর নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং তার আদর্শিক মিত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), যেটি ভারতের একটি ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী, আধাসামরিক ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবক পুরোনো সংগঠন, ভারতের নতুন আকারে একটি ইমেজ দাঁড় করাবে। মোদীর সরকারের সমালোচকরা বিরোধীদের অভিযোগে প্রায় ততটা সময় ব্যয় করেন যতটা তারা নিজের সম্পর্কে করেন। ২০২২-এর শুরুতে তারা আশা করেছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, প্রধান বিরোধী দল, সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে, পুনঃসংগঠিত হতে পারে এবং রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির আধিপত্যে ক্ষত তৈরি করতে পারে। তারপরও সেরকম কিছুই হয়নি বা চোখে পড়েনি।
বিজেপি ক্ষমতাসীন হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল এতদিন। একটি রাজনৈতিক সংকটের পরও ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রের সরকারের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছিল। কংগ্রেস পাঞ্জাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (এএপি) কাছে হেরে যায় দলটি। এএপি রাজধানী দিল্লি চালায় এখন এবং জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির আরেকটি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয় এএপিকে। কিন্তু পাঞ্জাব নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে, এটি শাসনভার চালাতে লড়াই করছে, পাশাপাশি দিল্লিতে দুর্নীতির তদন্তসহ একাধিক সংকট মোকাবিলা করছে।
২০২৩ সালে মোদীর সরকার ২০২৪ সালের জাতীয় বিধানসভা নির্বাচনের দৌড়ে রাজ্য রাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ একত্র করার প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে পারে। এটি সম্ভবত কেন্দ্রীয়-সরকারি সংস্থাগুলোকে তার সমালোচকদের ধরার জন্য, মিথ্যা দুর্নীতির মামলা দায়ের করতেও অব্যাহত রাখবে। তাদের সময়সাপেক্ষ আইনি কার্যক্রমে জড়াতে বা জাতীয় নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সমালোচকদের নিরপেক্ষ করতে প্রাথমিক ট্রায়ালেও রাখা হবে।
অনুগতদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে। এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের, বিশেষ করে মুসলমানদের স্থান সংকুচিত করবে। মোদীর বিলিয়নিয়ার মিত্র গৌতম আদানি ভারতের প্রধান স্বাধীন টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভির মালিকানা নিয়েছেন। মোদীর ভারত সম্পর্কে ধারণাকে বিদেশে জাতির প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচারণাও জোরদার করা হবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, যেসব শক্তি ‘ভারতের মধ্যে আর জয়ী হতে পারছে না’ বলে হতাশ তারা বিদেশে বক্তৃতা তৈরি করার চেষ্টা করছে এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকদের তাদের বিশ্বাস করার ব্যাপারে সতর্ক করছে।’ ভারতীয় রাজনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে বৈশ্বিক মে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টাও হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট