নতুন ড্যাপের কারণে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বসবাস করার জন্য মৌলিক চাহিদার অন্যতম আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ। তিনি বলেন, সবার জন্য মানসম্মত আবাসন আরও কঠিন হয়ে যাবে।
গতকাল রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল রানাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মেলা আয়োজক কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ বলেন, ড্যাপ নিয়ে এক বছর আগে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমরা যে শঙ্কার কথা বলেছিলাম সেই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নতুন ড্যাপের ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের কারণে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫ তলা। ফলে আগামীতে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বী হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
তিনি সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সঙ্গে ৪০ লাখ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের জোগান দিয়েছে। আমাদের আবাসন সেক্টর থেকে আয়কৃত অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ হয়েছে অন্য উৎপাদনশীল সেক্টরে। দেশের বেশ কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছে আবাসন শিল্প দিয়ে। ফলে আবাসন খাত অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে, যা প্রকারান্তরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে।
রিহ্যাব সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বিগত প্রায় ৪ মাসে আমাদের রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যেতে পারেননি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেননি। পুরাতন প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে। আমরা রাজউকসহ ড্যাপের আহ্বায়ক এলজিআরডি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরে ফার এর পরিমাণ সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবেন। আমাদের প্রত্যাশা নতুন ড্যাপে ফার এর পরিমাণ সংশোধন করা হবে।
কামাল মাহমুদ বলেন, অবকাঠামোগত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে আবাসন শিল্পের একমাত্র প্রতিষ্ঠান রিহ্যাব। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিন দশকের বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করছে রিহ্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ। আমাদের ধারাবাহিক কাজের কারণে অনেক নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বপ্ন সফল হয়েছে। আমাদের রিহ্যাব সদস্যদের কারণেই ঢাকার বাইরের অনেক মানুষ জমির মালিক হয়েছেন এবং প্রায় ৩ লাখ পরিবার ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।
তিনি বলেন, আবাসনের মালিকানা সৃষ্টি নাগরিকদের মনে আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করেছে। শহরের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করেছে। ঢাকায় অনেকগুলো নাগরিকদের নিজ ফ্ল্যাটের মালিকানা বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে অনেকটা স্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে।। বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকজন রিহ্যাব সদস্য অল্প জায়গায় কনডোমোনিয়াম প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। অনেকের এই কনডোমোনিয়াম প্রজেক্টের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। রিহ্যাব মেলা নিয়ে প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, রিহ্যাব মেলা-২০২২ এর উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, পিএএ ।
তিনি বলেন, বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম-এ মেলার উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রথমদিন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা দুপুর ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবে। বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় এবারও মেলায় দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি, অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলা চালাকালে পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন।