মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সূর্যমুখী চাষে বাড়তি আয়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রথাগত চাষের বাইরে নোনা জলে সূর্যমুখী চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রায় ২০ বছর আগে বরগুনার পাথরঘাটার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল হাকিম সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে ৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেন। এ থেকে পাওয়া ২২৭ কেজি বীজ থেকে ১০০ লিটার তেল উৎপাদন হয়। এখন তাঁর দেখাদেখি আরো অনেকেই করছে। পাথরঘাটার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে।
দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে বলেশ্বর আর পূর্বে বিষখালী নদী। সাগর ও নদীবেষ্টিত উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা। ভৌগোলিক অবস্থান বলে দিচ্ছে উপজেলার তিন দিকেই পানি। তবে সেই পানি নোনা। লবণের কারণে একসময় প্রায় ৬০ ভাগ জমি রবি মৌসুমে পতিত থাকত। কৃষি বিভাগ বলছে, পাথরঘাটা উপজেলার আয়তন ৩৮৭.৩৬ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নোনা পানির নদ-নদী বয়ে গেছে। উপজেলায় কৃষিজমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বলেন, বোরো মৌসুমে ৬০ ভাগ কৃষিজমি শুধু লবণাক্ততার কারণে বছরের পর বছর পতিত থাকত। সিডরের পর পতিত জমি চাষের আওতায় আসতে শুরু করে। তবে বছর পাঁচেক আগে থেকেই নোনা জলে কৃষকরা সোনা ফলাতে শুরু করে। কৃষকরা মাটির উর্ভরতা বৃদ্ধকারী ফসল সূর্যমুখী, ডাল, মরিচ, ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়ে। উপজেলার রূপদনে আলু চাষ হচ্ছে। ফলনের দিক বিবেচনায় আলু উৎপাদনে রূপদন দেশের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই ফসল লবণাক্ত জমিতে ভালো ফলন দিচ্ছে। সেচের ফলে মাটির লবণাক্ততা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আমনের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পটুয়াখালী আ লিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, রবি মৌসুমে লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী চাষের ফলে সেচ দিতে হয়। সেচের ফলে জমির লবণাক্ততা হ্রাস পায়। ফলে পরবর্তী বছর আমনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া সূর্যমুখী, ডাল, ভুট্টা লবণসহিষ্ণু ফসল।
আবদুল হাকিম বলেন, ‘সাগরতীরের এই উপজেলার ৮০ শতাংশ লোকই মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কৃষিজমি যা আছে তাতে শুধু আমন ফলত। লবণাক্ততার কারণে এখানকার জমি বোরো মৌসুমে পতিত থাকত। পতিত জমিতে প্রায় ২০ বছর আগে প্রথম সূর্যমুখী চাষ করি। তখন পড়শিরা এ নিয়ে ঠাট্টা করত। যখন ভালো ফলন ধরল, তখন শহরের লোকজন সূর্যমুখী বাগানে এসে ছবি তুলত। এর পাশাপাশি বোরো মৌসুমে মুগডাল চাষ শুরু করলাম। তাতেও অভাবনীয় ফসল পেলাম। ’
গহরপুর গ্রামের ফারুক সাজ্জাল বলেন, ‘সিডরের পর সাগরে যেতে ভয় করত। ভাবলাম সাগরে না গিয়ে বোরো মৌসুমে ক্ষেতে চাষ দিই। কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তার বলছে, লবণাক্ত জমিতে শস্য দিলে পুড়ে যাবে। আবদুল হাকিম স্যারের সঙ্গে কথা বলে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ হই। ’ প্রায় এক একর জমিতে এবার তিনি সূর্যমুখী চাষ করেছেন। গত বছর একই জমিতে চাষ করে যে তেল পেয়েছেন, তা বিক্রিতে লাভ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এবার সূর্যমুখীর ফল বড় হয়েছে। তেল বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলার ১ শতাংশ জমিও এবারের বোরো মৌসুমে পতিত নেই। আবাদযোগ্য সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টরে মুগডাল, ৫০০ হেক্টরে সূর্যমুখী আর বাকি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যদিও বছর পাঁচেক আগে এই জমির ৬০ ভাগই লবণাক্ততার কারণে পতিত থাকত। সেই পতিত জমিতেই কোটি কোটি টাকার ফসল ফলছে।
রূপদনের কৃষকরা বলছে, আলু চাষে সবচেয়ে লাভ বেশি। লাভের পাশাপাশি আলু চাষে ঝুঁকিও রয়েছে। তা ছাড়া পাথরঘাটায় রূপদন ইউনিয়নের বাইরে তেমন আলুর চাষ হয় না। এক হেক্টর জমিতে আলু চাষ করে কৃষকরা এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা আয় করেছে। মুগডাল চাষিরা বলছে, চাষ, সার আর বীজ মিলিয়ে হেক্টরপ্রতি মুগডাল চাষে ব্যয় হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু হেক্টরপ্রতি এক টন ডাল উৎপাদন হয়। ৭৫ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি করলে হেক্টরপ্রতি ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। তা ছাড়া ডাল চাষে তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। চাষাবাদ পদ্ধতিও সহজ। লবণাক্ত জমিতে ফলনও ভালো পাওয়া যায়। তাই কয়েক বছর ধরে ডালের আবাদ বাড়ছে।

সূর্যমুখী চাষিরা বলছে, হেক্টরপ্রতি চাষে ৫৫ হাজার ৯০০ টাকায় ব্যয় হচ্ছে। উৎপাদিত বীজ থেকে তেল হচ্ছে ৮০০ কেজি। প্রতি কেজি সূর্যমুখী তেল বাজারে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে হেক্টরপ্রতি লাভ হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা।
বরগুনায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ : বাসস সূত্রে প্রকাশ, জেলায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের আবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে বরগুনা জেলা দেশে অন্যতম। এছাড়াও জেলার ৩৯ হাজার ১০০ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা হিসেবে। বরগুনা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ছয় উপজেলায় চলতি মৌসুমে ডাল ও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৯ হাজার ১০০ কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এসব ফসলের মধ্যে ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, বোরো ধান, বোরো হাইব্রিড, মুগডাল ও খেসারি ডাল রয়েছে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম জানান, এবার চাষিরা গত বছরের তুলনায় হঠাৎ করে সূর্যমুখীর চাষে ঝুঁকছেন। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবার সূর্যমুখী বীজের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এবার কৃষি বিভাগ চাষিদের সূর্যমুখী বীজ প্রণোদনা দিয়েছে। এতে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর কৃষক পর্যায়েও কিছু বীজ মজুদ আছে। তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতি বছর ২৮ হাজার কোটি টাকার সয়াবিন তেল আমদানি হয়। তেলের আমদানি কমাতে সরকার এর চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তাতে করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। সূর্যমুখীর গাছ জ্বালানির কাজেও ব্যবহার হয়। আগামীতে এর চাষ আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
কৃষিবিদ বদরুল আলম জানিয়েছেন, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬ ও ফলিক অ্যাসিড। শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানিসহ এ তেল ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলমুক্ত। এ ছাড়া ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, মিনারেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান যুক্ত এ তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগীদের জন্য উপকারী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com