এমন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন থাকবে
শীতের তীব্রতায় দেশের সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ায় বেড়েছে শীতের এই তীব্রতা। একই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া, সঙ্গে কুয়াশার দাপট। এই শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতের কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদিকে ফুটপাত ও বস্তিতে বসবাসকারী নি¤œবিত্তদের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেড়ে গেছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণ।
রাজধানী ঢাকাকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। দেশের অন্যত্রও বিস্তৃত এ চাদর। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এমন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন থাকবে। তবে একটানা হয়তো থাকবে না। দুপুরের দিকে কিছু জায়গায় রোদের ঝিলিক দেখা যেতে পারে। দু-এক দিন পর আবার বেশি মাত্রায় কুয়াশা দেখা দিতে পারে। প্রাকৃতিক দুটি শর্ত পূরণ না হওয়ায় দ্রুত এ কুয়াশা কাটার সম্ভাবনা নেই। দেশে গত দুই দিন শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের তীব্রতা ছিল বেশ। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, তাপমাত্রার তুলনায় শীত বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ উত্তরের হিমেল বাতাস। দেশজুড়ে এমন বাতাস বইতে পারে আরও কয়েক দিন। সেই সঙ্গে আজ বুধবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে, ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের ২৪ ঘণ্টায়ও শ্রীমঙ্গলে ছিল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা, ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে আজ বলছেন, এ সময় দুটি কাঙ্ক্ষিত শর্ত পূর্ণ না হওয়ায় কুয়াশা কাটছে না। এর একটি হলো, পশ্চিমা লঘুচাপের ফলে বৃষ্টি হচ্ছে না। আরব সাগর থেকে আর্দ্রতা বহন করে নিয়ে এসে এ বৃষ্টি হয়। হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে তাতে জলীয় বাষ্প চলে যায় এবং কুয়াশা দূর করতে পারে। এতে রাতের তাপমাত্রা কমে গেলেও দিনের তাপ বাড়ে।
দ্বিতীয়ত, ওপরের বাতাসের (জেট উইন্ড) নি¤œগামী হওয়া। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২ থেকে ১৮ হাজার ফুট ওপর দিয়ে এ হাওয়া বয়ে যায়। ঘণ্টায় এটি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। এটি নিচে নেমে এসে প্রচ- বাতাস সৃষ্টি করলে তার ধাক্কায় জলীয় বাষ্প সরে যায়। কিন্তু সেটিও এখন হচ্ছে না। তাই কুয়াশাও কাটছে না। এখন যে কুয়াশা হচ্ছে, তা স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি ও তা তাপমাত্রার তারতম্যের জন্যই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, এর আরেকটি উৎস হচ্ছে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বয়ে আসা কুয়াশা। এটি পুরো গঙ্গা অববাহিকা দিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডিসেম্বরে সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। চলতি জানুয়ারিতেও দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। তবে দেখা যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।
দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শীতের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
নীলফামারী, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, নীলফামারী ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আসন সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী বেশি। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. গোলাম রসুল রাখি বলেন, ‘শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।
কুড়িগ্রামেও শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। শয্যা-সংকটে ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। প্রায় একই অবস্থা দেশের উত্তরা লের বেশির ভাগ হাসপাতালের।
নি¤œবিত্তদের কষ্ট: ঢাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ায় ফুটপাতে, বস্তিতে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে নি¤œবিত্তদের। বাসাবাড়িতে কাজ করা মনোয়ারা জানান, রাতে পলিথিনের ঘর, টিনের ফুটো দিয়ে হিমেল বাতাস ঢুকে যায়। ঘর হয়ে থাকে বরফের মতো ঠান্ডা। এই অবসস্থায় সকালে উঠে কাজে আসতেও কষ্ট হয়। এদিকে কাজে এসেই প্রায় সারা দিনই ঠান্ডা পানিতেই কাজ করতে হচ্ছে। শীতের একই ধরনের কষ্টের কথা বলেন রিকশাচালক শহিদুল। তিনি বলেন, হাত-পা জমে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারছি না। সন্ধ্যার দিকে পাতা, কাগজ কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত কাটানোর চেষ্টা করছি।
হকারদের রমরমা ব্যবসা: রাজধানীর পুরানা পল্টন, গুলিস্তান আর বায়তুল মোকাররম এলাকা ঘুরে দেখা যায় অন্য এক চিত্র। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম কাপড় কেনার হিরিক পড়ে গেছে। একই সঙ্গে সুযোগ বুঝে দামও বাড়িয়ে দিয়েছে হকাররা। অভিযোগ করছেন অনেক ক্রেতাই। কাপড় কিনতে আসা হালিমা খাতুন বলেন, হুট করেই এবার শীতটা বেড়ে গেছে। আগের মতো আর অবস্থা নেই। গরম কাপড় কম ছিল, তাই নতুন কিছু কাপড় কিনতে হচ্ছে। এদিকে কাপড় কিনতে এসে দেখি আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি চাইছে। একই অভিযোগ করেন মাহমুদ আলম। তিনি আরও বলেন, সংসার বড়। অল্পেই চালাই। অন্য খরচ বেড়েছে। তাই এবার গরম কাপড় তেমন একটা কিনিনি। এখন শীত বাড়ায় বাধ্য হয়েই কাপড় কিনতে হচ্ছে।