স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং সংক্রান্ত যে কোড আছে, এদেশে সেই কোড মানা হয়? ইথিকাল মার্কেটিং কোড এদেশে মানা হয়? চিকিৎসকরা আমার কথায় মন খারাপ করতে পারেন, কিন্তু অনেক চিকিৎসক শুনি ওমরা পালনে যান ওষুধ কোম্পানির টাকায়। অনেকে বলে, ফ্রিজ নেয় টেলিভিশন নেয়। কেউ আছে ফ্ল্যাট পর্যন্ত কিনে দেয়। যদি সত্যি এমন হয় তাহলে এগুলো তো কমানো যায়। সেদিন একটা কোম্পানির ওষুধ বাজার থেকে কিনতে গিয়ে দেখলাম তিন স্তরে প্যাকেটিং করে আকর্ষণীয় করেছে, এখানে কি খরচ কমানো যায় না? এই ব্যয় কমালে তো ওষুধের দামও কমানো সম্ভব।
গতকাল বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আয়োজনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস-ষষ্ঠ রাউন্ডের চূড়ান্ত ফলাফল অবহিতকরণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে যায় ট্রিটমেন্টের জন্য, আমাকে ফোন করে বলে যে তাদের একটু বলে দিতে। তাহলে ভালো ট্রিটমেন্ট দেবে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও বলে দিতে হচ্ছে—সে আমার পরিচিতি, একটু দেখে দিয়েন। তার মানে অবস্থা একটু বুঝেন। ২ হাজার, দেড় হাজার টাকা ফি দিয়ে একজন চিকিৎসককে দেখাতে হয়। তারও দেখি কথা বের করতে কষ্ট হয়।
তিনি আরও বলেন, রোগীর সন্তুষ্টির জন্য তার কথা বের করতে অনেক কষ্ট হয়। অনেকে আবার বলে- ‘আপনি ডাক্তার না আমি ডাক্তার’। রোগীকে তো বুঝায় বলতে হবে যে কোনটা ঠিক কোনটা ঠিক নয়। এই কথা বলার পর রোগীর তো টাকা পয়সা দিয়ে মন মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। এই যে খরচের জায়গা বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে যেটা বাড়ানো হচ্ছে সেটা হচ্ছে ওষুধের ব্যবহার।
তিনি বলেন, ওষুধ একবার লিখে দিলে আর বন্ধ নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে চলবে, কিছু আছে প্রয়োজন হয়, আমাদের চিকিৎসকরা বলে দেন যে এটা বন্ধ করা যাবে না। এখন মূল কারণ যদি আমরা জানতে পারি তাহলে প্রেসারের ওষুধ কেন খেতে হবে? ওষুধের কেনার যে প্রবণতা এই জায়গাটায় কাজ করা খুব দরকার।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্বে ক্রাইসিস চলছে। করোনা শেষ হওয়ার মধ্যেই আবার যুদ্ধ। সারা পৃথিবীতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ওষুধ কোম্পানির মালিকদের সংগঠন আমাকে বলে মিটিং করার জন্য। তার মানে ওষুধের দাম বাড়াতে চায়। এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের একটু জায়গা আছে। ওষুধের দাম বাড়াবে ঠিক আছে, কিন্তু যে কারণে ওষুধের দাম বেশি আছে সেটা আগে তাদের ব্যাখ্যা করতে হবে। ওষুধের দাম তো অনেক জায়গায় কমানোর সুযোগ আছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এনডিসি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. বর্দন জং রানা প্রমুখ।