বিখ্যাত সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ ছোটবেলায় তিনি পড়ার মতো বইয়ের জোগানও পাননি। তিনি তার পড়ার ক্ষুধা মেটাতেন স্কুলের পাঠ্যবই থেকেই। শিক্ষার্থী জীবনেই তিনি লেখালেখিও শুরু করেন। তবে সেটাও ছিল নিজের বোঝার জন্য। এমনকি নিজের লেখা প্রকাশের বিষয়েও তেমন কোনও ধারণা ছিল না বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রবিবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে নিজের শৈশব, পড়াশোনা ও লেখালেখিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এই সাহিত্যিক। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ডিজারশন’ শিরোনামে এই সেশনটি স ালনা করেন তারই একাধিক বইয়ের সম্পাদক আলেক্সান্দ্রা প্রিংগেল।
আবদুলরাজাক গুরনাহ বলেছেন, ‘ছোটবেলায় যখন পড়ার ইচ্ছা জেগেছিল, তখন বইয়ের বেশ দাম ছিল। বই কেনার চর্চা তখন ছিল না। আমি সেগুলোই পড়তাম, যেগুলো স্কুলে পাওয়া যেতো। ১০ বছর বয়সে আমার টাইফয়েড হয়েছিল, তখন এই রোগের চিকিৎসা খুব একটা সহজ ছিল না। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল এবং প্রায় ৩ মাস সেখানে ছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থায় আসলে স্কুলের বইগুলো পড়েছিলাম। যখন আমি স্কুলে ফিরে গিয়েছিলাম, তখন দেখলাম যে সব পড়া আমার মনে আছে। ভূগোল ক্লাসে শিক্ষক যখন প্রশ্ন করতেন, আমি সব উত্তর পারতাম। কারণ, আমি ভূগোল মুখস্থ করে ফেলেছিলাম।’
নিজের শিক্ষাজীবন এবং বই পড়ার অভ্যাস প্রসঙ্গে গুরনাহ বলেন, ‘শিক্ষা বলতে স্কুলেই শুরু। প ম শ্রেণি থেকে আমি একটি সরকারি স্কুলে লেখাপড়া শুরু করি। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরকারি স্কুল। শেষ করে দুপুরের খাবার খেতাম বাসায়। বেলা ২টা থেকে আবার আরেকটি স্কুলে যেতাম। সেখানে কোরআন শেখানো হতো। ২ ঘণ্টা কোরআন স্কুলে থাকতাম। এই স্কুলের একটি ভালো দিক ছিল, পবিত্র কোরআন পুরোটা পড়া শেষ হলে পরীক্ষা নেওয়া হতো। পরীক্ষায় পাস করলে গ্র্যাজুয়েট বলা হতো। তারপর আর কোরআন স্কুলে যাওয়া লাগতো না। অন্য বিশেষ একটি কারণে, হয়তো বা বিশেষ প্রতিভার কারণে আমি দুইবার পড়া শেষ করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর।’
নিজের প্রথম লেখা বই প্রসঙ্গে গুরনাহ বলেন, ‘আমি সেই সময়টা সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করেছিলাম, সুনির্দিষ্টভাবে কোনও কিছু না বলেই। আমাকে একজন প্রশ্ন করেছিল যে আপনি কতখানি বলতে পারেন? এই ক্ষেত্রে আপনি সেসব মানুষ যারা সেখানে ছিল তাদের বিপদের মুখে না ঠেলে দিয়ে কতখানি লিখতে পারেন। কারণ, আমি তখন সেই সময়ের নাগরিক অধিকার নিয়ে লিখতাম, শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাধীনতা নিয়েও লিখতাম। আরেকটি বিষয় নিয়ে লিখতাম যে একজনের সঙ্গে আরেকজনের এত নির্মমতা কেন! আমি কিছু মানুষকে জানতাম, যাদের সঙ্গে এমনটা করা হয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরার চেষ্টায় ছিলাম।’ যুক্তরাজ্যে নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেখানকার মানুষ কোনও কিছু বলার আগে চিন্তা করে না। অসংবেদনশীল, নির্মম শব্দ ব্যবহার করতো। মুখের ওপর বাজে কথা বলে দিতো এবং কোনও অনুশোচনাবোধ ছিল না। অসচেতনায় বর্ণবাদী আচরণ করলেও তারা সেটি আসলেই মিন করতো।’
এই সাহিত্যিক সবসময় গল্প লিখতে পছন্দ করতেন উল্লেখ করে বলেন, ‘সেগুলোকে অবশ্য তেমন কোনও লেখা মনে করতাম না। আমার শিক্ষকদের সেটি দেখতাম শুধু মাত্র চর্চার জন্য। আমি মূলত লিখতাম নিজের বোধগম্য থেকে। যেটা যেভাবে দেখতাম সেটা সেভাবেই লিখতাম। এরপর যা লিখতাম তা অনুভব থেকেই শুধু লিখতাম না, একজন পাঠক পড়বে সেটি মাথায় রাখতাম। ইংরেজিতে লেখা স্বস্তিকর লাগতো আমার কাছে, তবে শুরুতে কীভাবে লেখা ছাপাতে হয় তা জানতাম না।’