তিন যুগ পর বগুড়া শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চালু হলো অপারেশন থিয়েটার। বৃহস্পতিবার বেলা দশটায় শহরের গোসাইপাড়ার আনন্দ শর্মার স্ত্রী প্রসূতি স্বর্ণা শর্মার সিজারিয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশন চালু করা হয়। এরআগে লাল ফিতা কেটে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজিদ হাসান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃহাবিবুল আহসান তালুকদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাছিবুর রহমান ভুঁইয়া, বগুড়ার সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শফিউল আজম, শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ সামির হোসেন মিশু, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব শাহরীন, শেরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এমপি হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা সবসময় মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেন। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার চালু করা হলো। যাতে করে এই অঞ্চলের হাজার হাজার প্রসূতি মায়েরাসহ অন্যান্য জটিল রোগিরা অপারেশন সুবিধা পায়। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে প্রথম অপারেশন হওয়া স্বর্ণা শর্মার স্বামী আনন্দ শর্মা বলেন, আমার স্ত্রীর একটু সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে সন্তান না হওয়ায় চিকিৎসকরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। এজন্য বেসরকারি একাধিক ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। তারা যে খরচের কথা বলেছেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি একজন দিনমজুর আমার পক্ষে তা সংগ্রহ করা একটু কঠিন হয়ে পড়েছিল। এরইমধ্যে প্রতিবেশিরা আমার স্ত্রীকে শেরপুর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাই এখানে আনার একদিনই পরেই বিনামূল্যে সিজারিয়ান করা হয়েছে। কোনো প্রকার টাকা খরচ হয়নি। মা ও বাচ্চা দু’জনই ভালো আছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন চালু না হলে ধার-দেনা করে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে অপারেশন করা লাগত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, অবশেষে সরকারি এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার ৩৬বছর পর অপারেশন থিয়েটার চালু হলো। এতদিন অপারেশন থিয়েটার ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায় সরকারি এই হাসপাতালে অপারেশন করা যাচ্ছিল না। শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে অপারেশন চালু হওয়ায় এই উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার প্রসূতি মায়েরা এখান থেকে বিনামূল্যে সেবা পাবেন। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষের মাঝেই একটু ভুল ধারণা রয়েছে। তাঁরা মনে করেন হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করানো হয় না।এছাড়া এখানকার সেবার মানও ভালো নয়। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল। শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। যদি কোন গর্ভবতির সন্তান প্রসবে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেই সিজারের ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে করে হতদরিদ্র পরিবারের মানুষের বাড়তি টাকা নষ্ট না হয়। তাই সব প্রসূতি মায়েদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি করানোর জন্য আহবান জানান। এতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে। তবে প্রসূতি মায়েরা এই সেবা পেলেও এখনও জেনারেল সার্জন না থাকায় অন্যান্য অপারেশন করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।