প্রাাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত মানবতা। অসহায় দারিদ্র্রপীড়িত অধিকাংশ মানুষই। করোনার কারণে এ অসহায়ত্ব বেড়ে গেছে অনেকগুণ। কর্ম বন্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষের অভাবও বেড়ে গেছে। অভাবের তাড়নায় চিন্তিত অস্থির মানুষ স্বাভাবিক কাজ তথা জীবন-যাপনে গতি হারিয়ে ফেলেছে। মানবতার উপকারে আসে এমন চিন্তাভাবনাও লোপ পেয়েছে। এ কথা গুলো চিন্তা করেই এ বছরে মার্চে যখন বাংলাদেশে প্রথম করোনা সনাক্ত হওয়ার পরই কুমিল্লার লাকসামের কয়েকজন যুবক মিলে সেইভ দ্যা হিউম্যানেটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন গড়ে তোলেন। বর্তমানে ৩৫জন স্বেচ্ছাসেবি পারিশ্রমিক ছাড়াই এ সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে রেখেছেন। সেবা দিতে গিয়ে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবি কয়েকজনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় পৃথিবীর মানুষ যখন আতংকগ্রস্ত । সারা পৃথিবীর ন্যায় বাংলাদেশের মানুষ আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন এলাকায় লক ডাউন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে তখন অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ে এবং শহর ছেড়ে গ্রামে চলে আসে এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা দিয়ে মানুষের নজর কাড়ার পাশাপাশি মানব সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ওই স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনটি। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট ববিদউল আলম সুজন গত মার্চ মাসে নিজ এলাকায় কার্যক্রম শুরু করলেও তাদের এ কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ে পৌরসভার গন্ডি পেরিয়ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে। বর্তমানে কুমিল্লা নগরী সহ জেলার ৭টি উপজেলায় বিনা মূল্যে এ পর্যন্ত ২শ এর অধিক ব্যক্তিকে অক্সিজেন সরবরাহ, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন-কাফনে যখন তাদের আপনজনরাও এগিয়ে আসছেনা ঠিক তখন সংগঠনের নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকরা এ পযন্ত প্রায় ২৫জন করানায় মৃত্যুবরণ করা মৃত দেহ দাফন করেছেন, ১৭ দফায় ১ হাজার ৪শত জনকে খাদ্য সহায়তা, কয়েক হাজার মানুষকে সুরক্ষা সামগ্রী ও ঔষধ বিতরণ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ ছাড়া মানুষে রক্তের প্রায়োজনে প্রায় ৩শতাধিক ব্যাগ রক্তদান ও পরিবেশ রক্ষায় প্রি ১হাজারের উপরে বৃক্ষরোপন সহ নানাহ মানব সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ইতি মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা চালু করে সংগঠনটি আরো ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠেছেন। মহামারির এ সংকটে তাদের এ সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে সাধরণ মানুষ। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট ববিদউল আলম সুজন সেইভ দ্যা হিউম্যানেটি কার্যক্রম প্রসংগে বলেন, করোনাকালীন সময়ের শুরুতেই যখন বিভিন্ন এলাকা লকডাউন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়। তখন কর্মহীন হয়ে লাখো লাখো মানুষ। কর্মহীন মানুষগুলো তখন শহর থেকে গ্রামে আসতে শুরু করে। অনাহারে অধ্যহারে কষ্ট পেতে শুরু করে কর্মহীন সাধারণ মানুষ তা দেখে আমি সহ কয়েকজন যুবক চিন্তা করেছি তাদের পাশে দাড়ানো উচিত। তাদের কথা চিন্তা করে প্রথমে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা আরম্ভ করি আমার নিজ এলাকা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে। এর পর খুব দ্রুতই আমাদের সেবা কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করি। সেবা কার্যক্রম চলাকালে আমার বন্ধু সহ কয়েকজন খুব নিকটতম মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে খুব কষ্ট পেয়ে মরতে দেখেছি এর পরই ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংকের ঘোষনা দিয়ে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করি। যখন কোন রোগির অক্সিজেনের প্রয়োজনের খবর বা ফোন পেয়েছি আমাদের সংগঠনের স্বেচ্ছসেবকরা তাৎক্ষনিক অক্সিজেনের সিলেন্ডার নিয়ে তাদের পাশে হাজির হয়েছেন। রাত, দিন ও ঝড়-বৃষ্টি এমনকি স্বেচ্ছ সেবকের বাবার মৃত্যুদিনও তাদের সেবাকার্যক্রম ব্যহত হতে দেয়নি। সেবা দেয়ার পর মানুষের অনুভুতি প্রকাশের ভাষা গুলো বলে বুঝানো সম্ভব নয়। এইতে কয়েক পূর্বে করোনা রোগিদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা চালু করেছি। আসলে মানব সেবাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।