বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতে নায়করাজ আব্দুর রাজ্জাক কিংবদন্তি। আজ তার ৮১তম জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারিতে কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এ দাপুটে অভিনেতা। পরে ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন। প্রথম দিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে”ঘরোয়া” নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। ১৯৬৬ সালে ১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন সিনেমার পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন এ তারকা। খ্যাতিমান পরিচালক জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন রাজ্জাক। বেহুলায় সুচন্দার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। সেই থেকে শুরু করে শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ষাটের দশক থেকে প্রায় ছয় দশক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন এ শক্তিমান অভিনেতা।
আশির দশকে রাজ্জাককে ‘নায়করাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক-চিত্রনাট্যকার আহমদ জামান চৌধুরী। তিনি সিনেজগতে ‘খোকা ভাই’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। পত্রিকায় তিনি লিখতে লিখতে ‘নায়করাজ’ নামটি মুখে মুখে রটে যায়।
নায়করাজ রাজ্জাক একাধারে ছিলেন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি পাঁচ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্য প্রায় ৩০০ সিনেমার গল্পই তাকে কেন্দ্র করে। বাংলার পাশাপাশি উর্দু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি। নায়ক হিসেবে তিনি সর্বশেষ অভিনয় করেন ‘মালা মতি’ সিনেমায়, যেখানে তার নায়িকা ছিলেন নূতন। আনোয়ার হোসেন, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানার মতো শক্তিমান অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। মৌসুমী, রিয়াজ, শাকিব খান ও বাপ্পি চৌধুরীর মতো তারকাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। নায়করাজ সাতবার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার, চলচ্চিত্রের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের সিনেমার পাশাপাশি কলকাতার সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই নায়ক। দুই বাংলায়ই তাই তুমুল জনপ্রিয় তিনি।
নায়করাজের জন্মদিনে তার পারিবারিক উদ্যোগে দিনটিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ছোট ছেলে খালিদ হোসেন সম্রাট জানান, প্রায় সময়ই তিনি রাজধানীর বনানী কবরস্থানে যান ফজরের নামাজের পর। সেখানে গিয়ে বাবার কবরের পাশে কিছুটা সময় কাটান এবং দোয়া-দরুদ পাঠ করেন। আজকের এ বিশেষ দিনেও বাবার কবর জিয়ারত করে শুরু করবেন তিনি। আজ বাদ আসর বাসায় পারিবারিক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। খালিদ হোসেন সম্রাট বলেন, ‘আব্বা চলে গেছেন পাঁচ বছর হলো। কিন্তু সারা দেশের মানুষ আব্বাকে এখনো এত ভালোবাসে, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তা চলতে গিয়ে আমি অনুভব করি। অনেকের সঙ্গে দেখা হলে আব্বাকে নিয়ে গল্প করেন। তার সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। আর বাবার জন্মদিনে তাকে বিশেষভাবে মনে করে অসংখ্য মানুষ। আব্বার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পারিবারিকভাবে আজ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবার কাছে আব্বার জন্য দোয়া চাই আল্লাহ যেন আমার আব্বাকে বেহেশত নসিব করেন।’ রাজ্জাক বিচিত্র ধরনের চলচ্চিত্র ও চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৭৭ সালে নায়করাজ প্রথম ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমায় নায়করাজের বিপরীতে ছিলেন ববিতা। তার পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ছিল ‘আয়না কাহিনী’। এ সিনেমায় সম্রাট ও কেয়া অভিনয় করেছিলেন। রাজ্জাক অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা হচ্ছে বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’।
নায়করাজ রাজ্জাকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা: নায়ক অভিনীত ছবির তালিকা বেশ দীর্ঘ। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য সিনেমা বেহুলা, ছুটির ঘণ্টা, রংবাজ, ওরা এগারো জন, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, আলোর মিছিল, ময়নামতি, স্বরলিপি, দুই পয়সার আলতা, মাটির ঘর, মায়ার বাঁধন, পিচ ঢালা পথ, পরিচয়, প্রতিশোধ, পুত্রবধূ, সমাপ্তি, স্বরলিপি, সংসার, বাবা কেন চাকর ও সোনালী আকাশ। ?