মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

গরমে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হবে যেভাবে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

ঘাম দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘামে সাধারণত গন্ধ হয় না। কিন্তু যখন ঘামের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয়; তখন ঘামে দুর্গন্ধ হয়। আমাদের সারাদেহের ত্বকে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪-৫ মিলিয়ন ঘাম গ্রন্থি। গ্রন্থিগুলো ঘাম নিঃসরণ করে। এই ঘামের সঙ্গে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ব্যাকটেরিয়া জমে ঘামে দুর্গন্ধ তৈরি করে। আমাদের ত্বকেও লেগে থাকে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া। এসব অণুজীব ঘামের লবণ পানির সঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ তৈরি করে। ঘামের মধ্যে থাকে লবণ ও পানি। কয়েকদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে ঘামের সঙ্গে ছত্রাকও যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ তৈরি করতে পারে। বিদায় নিয়েছে শীতকাল। বাড়তে শুরু করেছে রোদের তীব্রতা। ভোরবেলা ঠান্ডা আর দুপুরে গরম। সেই সঙ্গে উড়ছে ধুলাবালি। অনেকেই ঘাম জমে ঠান্ডা গরম জনিত কাশির শিকার হচ্ছেন। ঘাম নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আবহাওয়া জনিত কারণ, পরিবেশ পরিস্থিতি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্যও ঘামের পরিমাণ বাড়তে পারে। ঘেমে যাওয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু দেহের বিশেষ কিছু কারণে অতিমাত্রায় দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়।
ঘামে দুর্গন্ধের কারণ: ১. বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর দেহের বিভিন্ন ধরনের হরমোনজনিত পরিবর্তন হয়। এ সময়ে অনেকের ঘামে দুর্গন্ধ হয়।
২. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চমাত্রার ফ্যাটি লিভার, কিডনির জটিলতা, ছত্রাক, ত্বকের অসুখ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ঘেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তুলনামূলক বেশি। এ ধরনের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমতে থাকে। তখন ঘামের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া জমে গন্ধ তৈরি হয়।
৩. অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, রান্নাঘরে চুলার তাপের কাছে দীর্ঘসময় কাজ করা, ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি পাচ্ছেন এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘাম ও দুর্গন্ধ দুটোই বাড়তে পারে।
৪. যাদের শরীরে লোমের পরিমাণ বেশি, দীর্ঘসময় বাসার বাইরে কাজ করতে হয়, নিয়মিত গোসল করার সুযোগ থাকে না, পেশাগত পোশাক দীর্ঘসময় পরতে হয়, এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘামের সঙ্গে দ্রুত অণুজীব মিশে যায়।
৫. পোস্ট মেনোপোজাল লেডিদের (যাদের মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে) কিছু হরমোনের তারতম্য এবং অনেকের হস্ট ফ্ল্যাশ হয়। তখন অতিরিক্ত ঘাম হয়।
৬. অনেকের হরমোনজনিত অসুখ এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অতিমাত্রায় ঘাম হয়।
৭. অতিমাত্রায় কফি, অ্যালকোহল, হৃদরোগে অনেকেই ঘেমে যান।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়: ১. নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ান সাবান; গোসলের পানিতে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ডেটল বা স্যাভলন মিশিয়ে গোসল করা উচিত। নিম পাতা সেদ্ধ করে অথবা গোলাপের পাপড়ি গোসলের পানিতে মিশিয়ে দিলে নিম পাতার রস ত্বকের ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীবকে ধ্বংস করবে। গোলাপের পাপড়ি সুন্দর ঘ্রাণ ছড়াবে।
২. বাইরের পোশাক নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত সুযোগ না হলে বাসার বাইরে থেকে এসেই কাপড় রোদে বা বাতাসে মেলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে কাপড় ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৩. দেহের লোম নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। লোমের গোড়ায় খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। দেহের যেসব স্থানে আলো বাতাস পৌঁছাতে পারে না, সেসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৪. সালফার জাতীয় খাবার, যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, লালচে মাংস, গ্রিল মাংস, অতিমাত্রায় কোমলপানীয়, অ্যালকোহল নিয়মিত খেলে ঘামে দুর্গন্ধ হয় তীব্র। এ জন্য নিজের দেহের ধরন বুঝে বডি স্প্রে, ডিওডোরেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে হবে।
৫. গরমে সহজে হজম হয় এ ধরনের খাবার খেতে হবে। আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। নিয়মিত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত। এতে দেহের তাপমাত্রার সাম্যাবস্থা বজায় থাকবে।
৬. অনেকের হাত-পায়ের তলা প্রচুর ঘেমে যায়। সুযোগ হলে হাত ধুয়ে ফেলবেন। অন্তর্বাস, মোজা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। স্কুল, কলেজ বা কর্মস্থলে নিয়মিত চামড়ার জুতো ব্যবহার করতে হলে, মাঝে মাঝে জুতো রোদে দিতে হবে। এতে জুতোর ভেতরে জমে যাওয়া রোগ-জীবাণু মারা যাবে। একই জুতো বার বার ব্যবহার না করে, কয়েক জোড়া জুতো ব্যবহার করতে হবে। বেশি দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৭. হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপো বা হারপার থাইরয়েডিজম, সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথ্রোম্যাটাস, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, এ ধরনের রোগীদের হঠাৎ অতিমাত্রায় ঘাম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮. অতিমাত্রায় মেকআপ বা হেয়ার ড্রায়ার যাদের ব্যবহার করতে হয়; তারা বাসায় মেকআপ বিহীন থাকার চেষ্টা করবেন।
৯. মসুর ডাল বাটা, আটা-ময়দা, চালের গুড়া, মেথি বাটা গোসলের সময় সাবানের মতো করে মাঝে মাঝে ব্যবহার করলে ত্বকের রোগ-জীবাণু, মরা চামড়াগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে। দুর্গন্ধও কমবে।
১০. নিয়মিত টাটকা রঙিন শাক-সবজি, ফল, কাঁচা সালাদ খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এতে ত্বকের উজ্জলতা ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
লেখক: ফারহানা মোবিন , লেখক এবং চিকিৎসক এমবিবিএস, এমপিএইচ (পাবলিক হেলথ্), সিসিডি, সি কার্ড, পিজিটি (গাইনি অ্যান্ড অবস), মেডিকেল অফিসার, গাইনি অ্যান্ড অবস, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com