নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, দেখে শুনে মনে হচ্ছে আমরা একটু ফুটন্ত পানির পাত্রের মধ্যে আছি। এবং আমরা নিজেরাই সোল্লাসে পাত্রের নীচে আগুন দিয়ে যাচ্ছি।
ধর্মীয় শিবিরের একটা বড় অংশ আমার বাঙালী পরিচয় মুছতে চায়! অথচ খন্ডিত মানুষ বানানোর এই প্রজেক্ট কতোটা হাস্যকর তারা জানেওনা! এটা নিয়া বিস্তারিত লিখলাম না কারণ আমরা সবাই জানি এটা কেনো হাস্যকর এবং অপ্রয়োজনীয়। তারা মনে রাখেনা- ‘ধর্ম লইয়া এই বাড়াবাড়ি আখেরে কত খারাপ ফল দে’!
কিন্তু আমি আজকে একটু লিবারেলদের নিয়ে বলতে চাই। যেহেতু আমার বন্ধু-স্বজন এমনকি আমিও এই ক্যাম্পেরই লোক। লিবারেলদের একটা অংশকে দেখেছি অদ্ভুতভাবে আমার ধর্ম পরিচয় নিয়া সংকুচিত।
স্পাইক লি যদি লেখে, ‘যীশু, সহায় হও’, উনি তাতেও কিছুমাত্র কম লিবারেল থাকেন না। কিন্তু ইসলাম বা এতদসম্পর্কীত উৎসব বা রিচুয়াল নিয়া কথা বলতে আমাদের লিবারেলদের সংকোচ দেখে আমার খুব মায়া লাগে। আপনারা কখনো কি দেখেছেন পিছলা কাপড়ের উপর ততোধিক পিছলা ওড়না পড়া কোনো মানুষকে? ওড়নাটাকে যথাস্থানে রাখতে কি প্রানান্ত কষ্টই না করতে হয়? ইসলাম প্রসঙ্গ আসলে আমাদের লিবারেল পাড়ায় আমি কখনো কখনো এরকম দেখেছি বৈকি! তারা সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন কখন না লিবারালিজমের ওড়নাটা খসে পড়ে যায়। ফলে আপনি দেখবেন যে, ঈদ বা শবে বরাত এইসব নিয়ে কথা বললে তারা ভাবে লিবারালিজম শেষ, কিন্তু পুজা বা বড় দিনের উৎসবে গিয়েও তাদের লিবারালিজমে একটুও আঁচড় লাগেনি! আমার কথা হচ্ছে একজন মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করতে পারেন, নাও পারেন। কিন্তু আমরা লিবারেল ক্যাম্প থেকে ইসলামকে যেভাবে ডিল করছি, সেটা আমাদের কেবল আরো ভগ্নাংশেই পরিণত করছে।
এই ডিল করার একটা সাম্প্রতিক নমুনা দেখে আমি মোটামুটি বিস্মিত। আমি আর তিশা আমার মেয়েকে নিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখে যাওয়ার প্ল্যান করতেছিলাম গত সোমবার। শোভাযাত্রা কখন শুরু হবে জানার জন্য ফেসবুক স্ক্রল করতেছিলাম। হঠাৎ একটা পোস্টার নজরে পড়লো। ‘সাম্প্রদায়িক পিশাচদের’ রুখে দিতে সবাইকে পহেলা বৈশাখের আমন্ত্রণ।
আমি তাকাইয়া তাকাইয়া ভাবলাম আমরা না সংস্কৃতিবান মানুষ? আমাদের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণের ভাষা যদি এই হয় তাহলে কি করে আমরা ঐসব মিসোজিনিস্ট এবং ব্যাডমাউথ ওয়াজকারিদের চেয়ে নিজেদের ‘রুচিশীল’ প্রমাণ করলাম। পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে অনেকেই বলতে পারে। যেমন আমরাও পারি তাদের বিরুদ্ধে বলতে। এবং যারা পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে বলছে, তাদের মধ্যে আমি কয়েকজনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি যারা মোটামুটি নিরীহ মানুষ। হয়তো বড়জোর তাদের বিভ্রান্ত নামে ডাকা যাইতে পারে। কিন্তু ‘পিশাচ’ যে তারা কোনো অর্থেই না- এই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নাই। আমি চোখ বন্ধ করে কয়েক বার তাদের ‘পিশাচ’ নামে ডাকতে চাইছি, পারি নাই। আচ্ছা, এই ঘৃণার বদলা ঘৃণা ছড়াইয়া আমরা কোন সংস্কৃতি চর্চা করছি?