মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি হবেই: কাদের কীটনাশক ও হরমোন ছাড়াই কৃষক পর্যায়ে টমেটো উৎপাদনে হাবিপ্রবি’র সাফল্য স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, ৩ দিন অবজারভেশনে থাকবে সুন্দরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ রাষ্ট্রপতির অবৈধ টিভি চ্যানেল ও লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে কার্যক্রম শুরু পাসপোর্ট অফিসে প্রতারণা: পুলিশের এসবি পরিচয়ে টাকা আদায় দেশে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ইউক্রেনের কাছে পারমাণবিক মহড়ার নির্দেশ পুতিনের সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা : টিআইবি

মানুষের প্রকাশ্য শত্রু

জাফর আহমাদ:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘হে মুহাম্মদ, আমার বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন মুখ হতে সেসব কথাই বের করে যা অতি উত্তম। আসলে শয়তানই মানুষের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে থাকে। প্রকৃত কথা হলো, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ (বনি ইসরাইল : ৫৩)
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শুত্রু। এটিই মানুষের সাথে শয়তানের প্রকৃত পারস্পরিক সম্পর্ক। মানুষের সৃষ্টির আদি ইতিহাস থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ আল কুরআনের মাধ্যমে শয়তানের এই শত্রুতার ইতিকথা জানিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য শয়তান ও তার শত্রুতার হেতু জানার জন্য আমাদের নিয়মিত অর্থসহ আল কুরআন পড়তে হবে। কোথায় কিভাবে শয়তান তার ফাঁদ ও জাল বিস্তৃত করে রেখেছে তা আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে সূরা আরাফের ১১ থেকে ২৫ পর্যন্ত আয়াত দেখুন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের (মানুষ) সৃষ্টির সূচনা করলাম তার পর তোমাদের আকৃতি দান করলাম অতঃপর ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সেজদা করো। এ নির্দেশ অনুযায়ী সবাই সিজদা করল। কিন্তু ইবলিস সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।
আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন : ‘আমি যখন তোকে হুকুম দিয়েছিলাম তখন সিজদা করতে তোকে কী জিনিসটি বাধা দিয়েছিল?’ শয়তান জবাব দিলো : ‘আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ এবং ওকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে।’
আল্লাহ বললেন : ‘ঠিক আছে, তুই এখান থেকে নিচে নেমে যা। এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নেই। বের হয়ে যা। আসলে তুই এমনদের অন্তর্ভুক্ত, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে লাঞ্ছিত করতে চায়।’ শয়তান বলল : ‘আমাকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যখন এদেরকে পুনর্বার উঠানো হবে।’ আল্লাহ বললেন : ‘তোকে অবকাশ দেয়া হলো।’ শয়তান বলল : ‘তুমি যেমন আমাকে গোমরাহিতে নিক্ষেপ করেছ, তেমনি আমিও এখন তোমার সরল সত্য পথে এ লোকদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব, সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে- সব দিক থেকে এদের ঘিরে ধরব এবং অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না।’
আল্লাহ বললেন : ‘বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত অবস্থায়। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখিস, এদের মধ্য থেকে যারাই তোর অনুসরণ করবে তাদের এবং তোকে দিয়ে আমি জাহান্নাম ভরে দেবো। আর হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী তোমরা দুইজনই এ জান্নাতে থাকো। যেখানে যা তোমাদের ইচ্ছা হয় খাও কিন্তু এ গাছটির কাছে যেয়ো না, অন্যথায় তোমরা জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’
তার পর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের পরস্পর থেকে গোপন রাখা হয়েছিল, তাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিলো। সে তাদেরকে বলল : ‘তোমাদের রব যে, তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করেছেন তার পেছনে এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই যে, পাছে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাও অথবা তোমরা চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়ে পড়ো।’ আর শয়তান কসম খেয়ে তাদের বলল, আমি তোমাদের যথার্থ কল্যাণকামী।
এভাবে প্রতারণা করে শয়তান তাদের দু’জনকে ধীরে ধীরে নিজের পথে নিয়ে এলো। অবশেষে যখন তারা সেই গাছের ফল আস্বাদন করল, তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজেদের শরীর ঢাকতে লাগল জান্নাতের পাতা দিয়ে।
আল্লাহ বললেন : ‘আমি কি তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে মানা করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?’ তারা দু’জন বলে উঠল, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। এখন যদি তুমি ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি রহম না করো, তা হলে নিঃসন্দেহে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।’
তিনি বললেন : ‘নেমে যাও তোমরা পরস্পরের শত্রু এবং তোমাদের জন্য একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত পৃথিবীতেই রয়েছে বসবাসের জায়গা ও জীবনযাপনের উপকরণ।’ আর বললেন, ‘সেখানেই তোমাদের জীবনযাপন করতে হবে এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করতে হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদের সবশেষে আবার বের করে আনা হবে।’ এই হলো সূরা আরাফের ১১-২৫ সরাসরি উপস্থাপন। আরো প্রত্যক্ষ করেছেন মানুষের সাথে শয়তানের সম্পর্ক। লক্ষ করেছেন শয়তানের প্রকাশ্য শত্রুতা ও তার চ্যালেঞ্জ। মানুষ জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান, এমনকি মানুষের মধ্যে যারা তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে, শয়তান তাদেরও শত্রু। কার্যসিদ্ধির পর অর্থাৎ পুরোপুরি গোমরাহিতে নিমজ্জিত করে শয়তান তার কাছ থেকে পালিয়ে যায়।
উল্লিখিত আয়াতে শয়তান বা ইবলিসের পরিচিতি নেই। ইবলিস মূলত জিনদের থেকে আগত। আর জিন জাতি আগুনের তৈরি। এ জন্য সে আল্লাহর প্রশ্নের জবাবে দম্ভভরে বলেছিল : ‘আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ এবং ওকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে।’
উল্লিখিত আয়াতে শয়তানের চ্যালেঞ্জ যাদের ওপর বাস্তবায়িত হবে, অর্থাৎ শয়তান যাদের গোমরাহিতে নিমজ্জিত করবে তাদের ব্যাপারে একটি মজার বিষয় হলো, হাশরের ময়দানে যখন আল্লাহর আদালত কায়েম হবে একক বিচারের দ- নিয়ে আল্লাহ বিচারের আসনে বসবেন, সে দিন শয়তান আল্লাহর আদালতে এদের বিপদগামী করার কাজটি অস্বীকার করবে। অর্থাৎ শয়তান তার অনুসারীদের কারো দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। সূরা ইবরাহিমের চতুর্থ রুকুতে শয়তানের উক্তিটি সরাসরি উপস্থাপিত হয়েছে : ‘তোমাদের ওপর আমার তো কোনো জবরদস্তি ছিল না, আমার অনুসরণ করার জন্য আমি তোমাদের বাধ্য করিনি। আমি তোমাদের আমার পথের দিকে আহ্বান জানিয়েছিলাম, এর বেশি কিছুই করিনি। আর তোমরা আমার আহ্বান গ্রহণ করেছিলে। কাজেই এখন আমাকে তিরস্কার করো না, বরং তোমাদের নিজেদের তিরস্কার করো।’ লেখক: শাখা ম্যানেজার, আইবিবিএল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com