ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ভয়াবহ পীড়া সৃষ্টি হয়েছে। একে ‘ম্যাড প্যানিক’ বা পাগলা আতঙ্ক হিসেবে অভিহিত করেছে মিডিয়া। কিয়েভ আক্রমণ চালাতে পারে এই ভয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একেবারে কাছের ইনারহোডার সহ জাপোরিঝিয়া অ লের ১৮টি সেটেলমেন্ট থেকে লোকজনকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া। হাজার হাজার গাড়িতে এসব মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর এসব মানুষকে নিয়ে গাড়িগুলো ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে বলে ইউক্রেনের মেলিতোপোলের মেয়র ইভান ফেডোরভ মিডিয়ার কাছে জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে’ বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)। এ সংস্থার পরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থা ক্রমশ এমন অবস্থায় যাচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত এবং ভয়াবহ বিপজ্জনক। এ নিয়ে আইএইএ বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এখনও ওই স্থাপনায় অবস্থান করছেন অপারেটিং স্টাফরা। ফলে এই স্থাপনা নিয়ে ক্রমেই উত্তেজনা, হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেখানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে নিয়ে এবং তাদের পরিবারকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ। আইএইএ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে যেসব তথ্য পাচ্ছেন তাতে বলা হয়েছে, ইনারহোডার সহ আশপাশের এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই ইনারহোডারেই বসবাস করেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশিরভাগ স্টাফ।
ওই অ লে ক্ষমতায় রাশিয়া প্রতিষ্ঠিত সরকারপ্রধান ইয়েভগেনি বালিতস্কি বলেছেন, কয়েকদিন ধরে শত্রুপক্ষ ফ্রন্টলাইনের খুব কাছে বসতিতে গোলা নিক্ষেপ বৃদ্ধি করেছে। তাই আমি লোকজনকে সেখান থেকে উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথমে সব শিশু এবং তাদের পিতামাতাকে, প্রবীণ ব্যক্তিদের, চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিদের এবং হাসপাতালে থাকা রোগিদের উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা দিয়েছে আইএইএ। গত বছর আগ্রাসন চালানোর কয়েকদিনের মধ্যেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলে নেয় রাশিয়া। তার আগে গোলা নিক্ষেপের ফলে অস্থায়ীভাবে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মার্চে আইএইএ সতর্ক করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ শীতলীকরণ সিস্টেম ঠা-া রাখা হচ্ছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া আগ্রাসন চালানোর পর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্টাফ সংখ্যা কমে গেছে। তবে এর ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এটি নিরাপদে পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত স্টাফ আছে তাদের। জাপোরিঝিয়া অ লের বেশিরভাগ এলাকা দখল করেছে রাশিয়ার সেনারা। কিন্তু তারা এর রাজধানী দখলে নিতে পারেনি। রোববার ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ বলেছেন, উদ্ধার করা ব্যক্তিদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বারদিয়ানস্ক এবং প্রাইমরস্ক শহরে। এ দুটি শহর রাশিয়া ভূখ-ের আরো ভিতরে। মেলিতোপোলের নির্বাসিত মেয়র ইভান ফেদোরভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ওই এলাকার দোকানপাটে পণ্যসামগ্রী এবং ওষুধপত্র শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেছেন, হাসপাতালগুলো রোগিদের ছাড়পত্র দিয়ে রাস্তায় ঠেলে দিচ্ছে। তাদের ভয়, ওই এলাকায় যদি ইউক্রেন হামলা চালায় তাহলে বিদ্যুত এবং পানি সরবরাহ স্থগিত হয়ে যাবে। এই ভয়ে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, উদ্ধার করা ব্যক্তিদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ হলেন রাশিয়ার সেনা সদস্য।