শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪, ১২:০৫ অপরাহ্ন

উন্নয়নের নামে রৌমারীতে ভেকু ও ড্রেজার খাচ্ছে এলাকার সম্পদ

শওকত আলী মন্ডল (রৌমারী) কুড়িগ্রাম :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ মে, ২০২৩

হাইকোর্ট ও মন্ত্রী পরিষদ থেকে সরকারীভাবে প্রশাসনকে দেয়া কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোনো ভাবেই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না কুড়িগ্রামের রৌমারীতে। এ উপজেলায় এক শ্রেণির প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী ব্রহ্মপুত্র, সোনাভরি, জিঞ্জিরাম, ধর্ণী, হলিহলিয়া কালাপানি নদের তীর ঘেঁষে সারি সারি ড্রেজার ও ইস্কুভেটর (ভেকু) মেশিন বসিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনের ফলে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে বসত-বাড়ী, আবাদী জমি, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা ভেঙ্গে রৌমারীর স্থলভাগের পরিমাণ কমে গেছে। বাকী যেটুকু আছে সেগুলোও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নদের বামতীরে ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চলমান প্রকল্প গুলোর লক্ষ ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ভাঙ্গনের মুখে পড়া এলাকার সাধারণ মানুষ দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ২২ মে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্র নদ, সোনাভরী, হলহলি, জিঞ্জিরামসহ ছোট নদীর তীব্র ¯্রােত বেড়ে যাওয়ায় ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে হুমকির মুখে পড়ে চরশৌলমারী, বন্দবেড়, রৌমারী ও যাদুরচর ইউনিয়নের খেরুয়ারচর, ঘুঘুমারী, খেদাইমারী, বলদমারা, বাগুয়ারচর, পশ্চিম খনজনমারা, ফলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর, বাঘমারা, মিয়ারচর মুখতোলা, দিগলাপাড়া, ধনারচর, বকবান্দা, খেওয়ারচর, আলগারচর বাগেরহাটসহ ২০ টি গ্রামের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বালু উত্তোলনের একটি চক্র ব্রহ্মপুত্র নদের ঘুঘুমারী থেকে বলদমারা হয়ে ফলুয়ারচর নৌকাঘাট, কর্তিমারী নৌকাঘাট ও পাখিউড়া পযর্ন্ত প্রতিদিন অবৈধ ড্রেজার, কাকড়া ও ভেকুর মাধ্যমে মাটি ও বালু উত্তোলন করছেন। উত্তোলনকৃত বালু ও দোয়াশ মাটি উপজেলার প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করে ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করেন। অপরদিকে অবৈধ ট্রাক্টর (কাকড়া) চলাচলে কাঁচা-পাঁকা রাস্তাগুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছাঁয়ায় উন্নয়নের নামে অবৈধভাবে বালু ব্যবসায়ীরা নদী পাড়ের মানুষের ক্ষতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে সচেতন মহল মনে করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ধনারচর চরের গ্রামের আলম, লিয়াকত হোসেন, কুটিরচর গ্রামের হাসান আলী নজরুল ইসলাম, বাগুয়ারচর গ্রামের আছমত হোসেন, বলদমারা গ্রামের জহির উদ্দিন, পশ্চিম খেদাইমারী গ্রামের সমশের ও কোবাদ আলীসহ অনেকেই জানান, ধনারচর চরের গ্রাম, কর্ত্তিমারী নৌকা ঘাট এবং পাখিউড়া ব্রীজের নিচ থেকে ঘুঘুমারী নৌকাঘাট পর্যন্ত নদী থেকে যেভাবে ড্রেজার. কাকড়া (ট্রাক্টর) ও ভেকু দিয়ে বালু মাটি কাটা হচ্ছে, এভাবে অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু ব্যবসায়ী চক্রদের গ্রামবাসীরা বাধা দিলে তাদেরকেও নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারঃ) এবিএম সারোয়ার রাব্বি ক্ষভের সাথে বলেন, এখানকার মানুষ নিজের স্বার্থে দৌড়ায়। যাদের ক্ষতি হচ্ছে তাদের দিকে লক্ষ নাই। সরকারি আইন মেনে ভ্রাম্যমান আদালতে জেল জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারি ভাবে অভিযান চলমান রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, এবিষয়ে আমি জানি এবং ড্রেজার, কাকড়া ও ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com