হজ ইসলামের প স্তম্ভের অন্যতম। যাদের পবিত্র মক্কায় যাতায়াত ও হজের কাজ সম্পাদন করার মতো আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ।
এবার পবিত্র হজ জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই এবার যারা হজে যাচ্ছেন তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। এসব বিষয়কে সামনে রেখে হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো-
হজ সফরের আগে: ১. অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে দুই রাকাত নফল সালাত ঘরে আদায় করুন। শুকরিয়া আদায় করুন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এমন মুবারক সফরের তাওফিক দিয়েছেন। দোয়া করুন, তিনি যেন আপনার সফর সহজ করে দেন এবং আপনার হজ কবুল করে নেন। ২. এরপর পরিবার-পরিজন থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে যাত্রা করুন এবং তাদের জন্য দোয়া করুন এবং সবার কাছে দোয়া চান। ৩. সব গুনাহ থেকে তওবাহ করুন। কারো কোনো হক বা পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করুন। ৪. কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিন।
হজ সফর শুরু হলে: আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে প্রতিজ্ঞা করুন : ক. জামাতে সালাত আদায় করবেন। খ. সাথী বা অন্য কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করবেন না। আপনার ব্যবহারে কেউ যেন কখনো কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখবেন। গ. পাপ হয় এমন কথা বলবেন না। ঘ. সাথীদের মধ্যে কোনো আলেম থাকলে তার সাথে ওঠাবসা করুন এবং ইলমে দ্বীন শিখে নিন। বিশেষ করে হজে যা আপনার প্রয়োজন তা শিখে নিন।
যেসব আসবাবপত্র সাথে নেবেন: ইহরামের কাপড় (আড়াই হাত বহরের) আড়াই গজ করে দুই পিস এবং তিন গজ করে দুই পিস। লুঙ্গি দু’টি, গেঞ্জি দু’টি, জামা-পাঞ্জাবি তিনটি, গায়ের চাদর একটি, বিছানার চাদর দু’টি, পায়জামা-প্যান্ট দু’টি, গামছা-তোয়ালে একটি, স্পঞ্জ স্যান্ডেল একজোড়া, বাটি একটি, চামচ একটি, গ্লাস একটি, খাবার প্লেট একটি, ছোট আয়না, চিরুনি, সরিষার তেল, বডি লোশন, খিলাল, মিসওয়াক অথবা ব্রাশ, টুথপেস্ট, টয়লেট পেপার, রশি ২০ গজ, ছোট হ্যান্ডব্যাগ একটি, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবনের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, খাবার স্যালাইন পাঁচ প্যাকেট, সর্দি এবং জ্বরের প্রয়োজনীয় ওষুধ, দুই কেজি চিঁড়া ও এক কেজি গুড়, তায়াম্মুমের জন্য মাটি, মোবাইল চার্জার, মাল্টিপ্লাগ ও জামা আয়রনের ছোট একটি ইস্ত্রিও সাথে নিতে পারেন।
মহিলা হজযাত্রীদের অতিরিক্ত আসবাব: মাথার ক্যাপ একটি, হাত ও পায়ের মোজা, সালোয়ার দু’টি, কামিজ দু’টি, বিছানার চাদর দু’টি।
আরো কিছু পরামর্শ: হজক্যাম্পে যত দিন অবস্থান করবেন, আপনার মালপত্র খেয়াল রাখবেন। কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেয়া বাকি থাকলে অবশ্যই তা নিয়ে নিন। বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে নিন।
জেনে নিন আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়। যদি মদিনায় হয় তাহলে এখন ইহরাম বাঁধা নয়; যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম বাঁধতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কা যান। যদি মক্কা যেতে হয় তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরাম বাঁধা ভালো।
ইহরাম : প্রথমে সেলাইবিহীন তহবন্দ ও চাদর পরিধান করতে হবে। তারপর হজ কিংবা ওমরার নিয়তে ইহরামের দুই সালাত আদায় করতে হবে এবং সালাত শেষে তালবিয়া অর্থাৎ- লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক… এ দোয়া পাঠ করতে হবে। ইহরামের কাপড় পরিধান থেকে শুরু করে এ তালবিয়া শেষ করার সাথে সাথেই ইহরাম শুরু হলো বলে গণ্য করা হবে। পুরুষের ইহরাম : ১. জোরে তালবিয়া পাঠ করা সুন্নাত; ২. ইহরাম অবস্থায় কোনো অবস্থাতেই মাথা ঢাকা যাবে না; ৩. সেলাই করা কাপড় পরা অবৈধ।
মহিলাদের ইহরাম : ১. মুখ ঢাকতে পারবেন না। তবে মোজা পরতে পারবেন; ২. মাথা ঢেকে রাখা জরুরি; ৩. সেলাই করা কাপড় পরিধান করা বৈধ; ৪. তালবিয়া আস্তে আস্তে পাঠ করা উত্তম।
হজক্যাম্প থেকে বিমানবন্দর: বিমান উড্ডয়নের সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছান। আপনার নাম-ঠিকানা লেখা ব্যাগ বা স্যুটকেসে কোনো পচনশীল খাবার রাখবেন না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগেই গুছিয়ে নিন। বিমানবন্দরে লাগেজে যে মাল দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না দেখে নেবেন।
মনে রাখবেন, বিমানের কাউন্টারে মাল রেখে টোকেন দিলে তা যতœ করে রাখবেন। কারণ জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন দেখালে সেই ব্যাগ আপনাকে ফেরত দেবে।
বাংলাদেশ সরকারের দেয়া পরিচয়পত্র, পিলগ্রিম পাস, বিমানের টিকিট, টিকা দেয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝুলানোর ব্যাগে যতœ করে রাখুন। সময়মতো বিমানে উঠে নির্ধারিত আসনে বসুন।
জেদ্দা বিমানবন্দর পৌঁছালে: আপনার মুয়াল্লিমের গাড়ি আপনাকে জেদ্দা থেকে মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন, সেখানে নামিয়ে দেবে। মুয়াল্লিমের নম্বর (আরবিতে লেখা) কব্জি বেল্ট দেয়া হবে, মনে করে তা হাতে পরে নেবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেয়া পরিচয়পত্র (যাতে পিলগ্রিম পাস নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ইত্যাদি থাকবে) গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন।
জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। চলার পথে তালবিয়া পাঠ করুন (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…)।
মক্কায় পৌঁছে: পবিত্র মক্কা দেখামাত্রই আপনি এ দোয়া পড়বেন, হে আল্লাহ! আমাকে এ পবিত্র শহরে ঈমান, নিরাপত্তা ও মঙ্গলসহকারে পৌঁছে দিন। নিরাপদে থাকার তাওফিক দিন এবং এ নগরীর সম্মান ও আদব রক্ষার তাওফিক দান করুন। মক্কায় পৌঁছে আপনার থাকার জায়গায় মালপত্র রাখুন। বিশ্রামের প্রয়োজন থাকলে বিশ্রাম করুন। আর যখন সালাতের ওয়াক্ত হয় সালাত আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে দলবদ্ধভাবে ওমরার নিয়ত করে থাকলে ওমরাহ পালন করুন। পবিত্র মক্কায় পৌঁছে হারাম শরিফের সীমানায় প্রবেশ মাত্র আপনি মনে করুন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শাহী দরবারে আপনি হাজির হয়েছেন। তাই আদবের সাথে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করুন। মসজিদুল হারামে প্রবেশ করার সময় বিসমিল্লাহ ও দরুদ শরিফ পড়ার পর ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা’ পড়বেন। কোনো দরজার সামনে সালাত পড়া ঠিক নয়, এতে পথচারীর কষ্ট হয়। ‘হাজরে আসওয়াদে’ চুমু দেয়া সুন্নত। তবে ভিড়ের কারণে না পারলে দূর থেকে চুমুর ইশারা করলেই চলবে। ভিড়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া যাবে না। কাবা শরিফ প্রথম দেখামাত্র দোয়া কবুল হয়, তাই বিগলিত অন্তরে আরো যত দোয়া আপনি করতে পারেন করুন। লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক