বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জলঢাকায় নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল বন্ধ করার অভিযোগ কালীগঞ্জে পল্লী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিআরডিবির ঋণ বিতরণ সৎ ও নিষ্ঠাবান উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবী-উল-কবির নকলায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ফটিকছড়িতে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বশর নামে এক সিএনজি ড্রাইভারকে মারধর! দুর্গাপুরে বিশ্বমা দিবস উপলক্ষে গাছের চারা বিতরণ জেলা পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কর্মশালা মাউলী ইউনিয়বাসীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নব নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কটিয়াদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, প্রার্থীরা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে ভোটারদের আগ্রহ কম প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাঠকর্মীদের প্রচেষ্টায় পরিবার পরিকল্পনায় সাফল্য

নোমোফোবিয়া বাড়ছে

মো. মুমিনুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩

শপিং মল, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, গাড়ি, পার্ক থেকে শুরু করে অফিসের ডিউটি চলাকাল পর্যন্ত যেখানেই চোখ যায় লক্ষ করা যায় অগণিত মানুষ মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কার বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার গতিপথ। একই সাথে ত্বরান্বিত করেছে ডিহিউম্যানিজেইশনকে। আমরা প্রায় সময়ই দেখতে পাই, অনেকেই মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে না থাকলে উদ্বেগ, বিষণœতা, আতঙ্ক ও নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। তাহলে, নিশ্চিত করে বলা যায় তারা প্রযুক্তির অব্যবহারে জন্ম নেওয়া ‘নোমোফোবিয়া’ নামক রোগে আক্রান্ত! ঘঙ গঙনরষব-ঢ়যড়হব চঐঙইওঅ থেকে নোমোফোবিয়া (ঘঙগঙচঐঙইওঅ) শব্দটি এসেছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারায় বা ফোন ছাড়া থাকার ভীতি থেকে তৈরি হওয়া আতঙ্ক বা উদ্বিগ্নতাকে নোমোফোবিয়া বলে। এই রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হচ্ছে, প্রথমত, মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ ফুরালেই হতাশ হওয়া। দ্বিতীয়ত, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলাকালেও বার বার নোটিফিকেশন চেক করার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া। তৃতীয়ত, ইন্টারনেট থাকতেই হবে। চতুর্থত, গোসল, খাওয়া ও ঘুমানোর সময় ফোন ব্যবহার করা। এক কথায় বললে মোবাইল ছাড়া নিজেকে অসহায় মনে করা। নোমোফোবিয়া রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণে ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নোমোফোবিয়া সাধারণত তরুণদের মাঝে বেশি হলেও সাম্প্রতিককালে ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনসচেতনতার অভাবে এই রোগটি দিনদিন ভয়ংকর মানসিক ব্যাধিতে রূপ ধারণ করছে। জরুরি যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদির প্রয়োজনে মোবাইল আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। মোবাইল আমাদের যেমন উপকার করে, তেমনি এর অপব্যবহার আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করে। অতিরিক্ত সময় মোবাইল ব্যবহারের ফলে চোখ জ্বালা করা, ঘাড় ব্যাথা, কানে সমস্যা, মাথা ব্যাথা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও মোবাইলের অপব্যবহারে শিক্ষার্থীদের চিন্তা শক্তি কমে যাওয়ায় সৃজনশীলতার এই যুগে তারা পিছিয়ে পড়ছে। বিশ^ব্যাপী যেখানে উদ্ভাবনী দক্ষতাসম্পন্ন জনবল তৈরির কাজ চলছে, সেখানে আমাদের দেশের ছাত্রসমাজের সৃষ্টিশীল স্বক্ষমতাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করা জাতির পায়ে কুঠারাগাত করার শামিল।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ^বিদ্যালয়পড়–য়াদের এক-তৃতীয়াংশ নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এই রোগটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে, যার প্রভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার কারণে তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের একটা অংশ পড়াশুনা থেকে ছিটকে পড়ছে, যা জাতির জন্য খুবই হতাশাজনক। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বর্তমান বিশে^ অকালে পড়াশুনা থেকে ছিটকে যাওয়া মোটেই কাম্য নয়।
করোনা মহামারীর সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে বিশ^ব্যাপী ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। করোনাকালীন অবসর সময়ে মানুষ নিঃসঙ্গতা থেকে বাঁচতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানুষ বাস্তবে নিঃসঙ্গ হয়ে গেছে। সামাজিক দূরত্ব বেড়েছে বহুগুণ। আবার, দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে গেছে। গেমিং অ্যাপের প্রতি আসক্ত হয়ে অনেকেই নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। নোমোফোবিয়ার কারণে তাদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় অসংখ্য বাবা-মা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন কিনে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে, অনেক বাবা-মা চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সন্তানদের সময় কাটানোর জন্য মোবাইল ফোন কিনে দিচ্ছেন। সুতরাং মোবাইল ফোনে আসক্তির জন্য অভিভাবকের অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। নোমোফোবিয়া থেকে বাঁচতে আমাদের বাস্তব জীবনের কাজগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। নিকটে থাকা বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফোনটা হাতে না নিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকবে। আবার, বিকালে দৃষ্টিনন্দন স্থানে ভ্রমণ কিংবা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সময় কাটানোও আনন্দদায়ক। এতে করে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। অবসর সময়ে বই পড়া, বাগান করা ও খেলাধুলা করা নোমোফোবিয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। এতে শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকবে। অবসরে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাসটি একই সাথে জীবনকে বদলে দিতে পারে। মনে রাখা জরুরি, ওমর খৈয়াম বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে কিন্তু বই, অনন্ত যৌবনা।’ সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণের উচিত নোমোফোবিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা। লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com