রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

সালাতুল বিতিরে অঙ্গীকার

মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩

বিতির সালাতে আমরা দোয়া কুনুত পড়ি সর্বশেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে। যথা-‘হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট সাহায্য চাই এবং আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার ওপর ঈমান আনি এবং আপনার ওপর ভরসা করি এবং আপনার উত্তম প্রশংসা করি এবং আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এবং আপনার অকৃতজ্ঞ হবো না। আমরা আপনাকে পরিহার করি না এবং যে বা যারা আপনার অবাধ্য হয় আমরা তাদের সঙ্গ ত্যাগ করি। হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনার জন্যই সালাত আদায় করি, আপনাকে সিজদা করি, আমরা আপনারই নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করি ও সে দিকেই দ্রুত ধাবিত হই, আমরা আপনার অনুগ্রহ কামনা করি, আপনার শাস্তিকে ভয় পাই। নিশ্চয়ই কাফিরদের জন্য আপনার শাস্তি নির্ধারিত।’
উপরোক্ত দোয়াতে আল্লাহর সাথে আমরা কমপক্ষে ১৪টি অঙ্গীকার করেছি যথা- ১. আল্লাহর নিকটই সাহায্য চাবো, ২. আল্লাহর নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করব, ৩. আল্লাহর ওপরই ঈমান আনব, ৪. আল্লাহর ওপরই ভরসা করব, ৫. আল্লাহরই উত্তম প্রশংসা করব, ৬. আল্লাহরই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব, ৭. আল্লাহকে পরিহার করব না, ৮. যে বা যারা আল্লাহর অবাধ্য হয় আমরা তাদের সঙ্গ ত্যাগ করব, ৯. একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করব, অন্য কারো নয়, ১০. একমাত্র আল্লাহর জন্যই সালাত আদায় করব, ১১. আল্লাহকেই সিজদা করব, ১২. আল্লাহরই নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করব ও সে দিকেই দ্রুত ধাবিত হবো, ১৩. আল্লাহরই অনুগ্রহ কামনা করব, ১৪. আল্লাহরই শাস্তিকে ভয় পাবো।
ধর্মীয় ভাই ও বোনগণ! আল্লাহর সাথে আলোচ্য অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে আমরা কয়টি অঙ্গীকার রক্ষা করি! প্রতিজ্ঞা রক্ষা না করার কারণে আমাদেরকে কি পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি হতে হবে না, যেখানে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি সালাতরত অবস্থায়? নিশ্চয়ই হতে হবে।
আলোচ্য প্রতিজ্ঞাগুলো রক্ষা না করার কারণ আমাদের অসাধারণ ব্যস্ততা, অলসতা, আমোদ-প্রমোদে মত্ততা এবং প্রতিজ্ঞাগুলোর অর্থ না জানার কারণে আমরা সেসব অঙ্গীকার যথাযথভাবে পালন করছি না বলে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন হতে বি ত হচ্ছি। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিজ্ঞাগুলো রক্ষা করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করা এবং তাঁর ক্রোধ বা রোষানল থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ আমাদের ইহকাল ও পরকালের চূড়ান্ত সফলতা, অন্যথায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতা।
দৃঢ়ভাবে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আল্লাহর ওপর সত্যিকার অর্থে নির্ভরশীল হয়, আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করে এবং সাথে সাথে সব প্রয়োজনে যথাসাধ্য চেষ্টা করে উপরোক্ত প্রতিজ্ঞাগুলো রক্ষা করে, ইনশা আল্লাহ তারা আল্লাহর তরফ থেকে পেতে থাকবেন সালামাত, রহমত, বরকত ইত্যাদি। ফলে তাদের পার্থিব জীবনে অচলাবস্থা আসবে না, বরং তারা থাকবে সচল এবং প্রশান্ত মন নিয়ে যদি তারা আল্লাহর অন্যান্য বিধানাবলী যথাসাধ্য যথাযথভাবে পালন করতে থাকে।
বিতির সালাত একটি ব্যতিক্রমধর্মী সালাত। এই সালাতে তিন রাকাতের প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পাঠ করতে হয়, কিন্তু অন্য কোনো সালাতে যেমন মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত সালাতের শেষ রাকাতে এবং জোহর, আসর ও এশার ফরজ চার রাকাত সালাতের শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হয় এবং এ ফরজ সালাতগুলোতে আলোচ্য রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হয় না। তা ছাড়া বিতির সালাতের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা তিলাওয়াতের পর হাত তুলে তাকবির দিয়ে দোয়া কুনুত পড়তে হয়, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। দোয়া কুনুতের প্রত্যেকটি শব্দ দ্বারা আমরা এক একটি অঙ্গীকার করছি আল্লাহর সাথে, যা বিস্তারিতভাবে ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। ‘হে পরম করুণাময় আল্লাহ! দয়া করে আপনি আপনার গোলামদেরকে তাওফিক দিন তারা যেন বিতির সালাতে এবং অন্যান্য স্থানে আপনার সাথে যে অঙ্গীকারগুলো করে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করে আপনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে পারে চিরস্থায়ী জীবনে মহাসফলতার স্বার্থে। আমীন। লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com