মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

পাবনার ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ডাঃ হালিমা খানমের সিজার করা ২ রোগীর মৃত্যুর ১০ দিন পার হলেও কর্তৃপক্ষ নিরব

মোবারক বিশ্বাস পাবনা :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার ভাঙ্গুরা হেলথ কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে একই দিনে সিজার করা ২জন প্রসূতি মায়ের ৪দিনের ব্যবধানে মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার ১০দিন অতিবাহিত হলেও হেলথ কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পাবনার সিভিল সার্জন। ২জনের মৃত্যু হলেও সিভিল সার্জন এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভাঙ্গুরা থানার ওসি তদন্ত বলেন, কোন অভিযোগ না থাকায় এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। স্থানীয়দের দাবি অনেক টাকা লেন-দেনের মাধ্যমে বিষয়টি ধামা চাঁপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে নিহতদের পরিবারের দাবি ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরবর্তিহাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২৭ জুন পাবনার ভাঙ্গুরা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন চাটমোহর উপজেলার মহেলাহাট গুনাইগাছা এলাকার মোঃ আসাদের স্ত্রীলাকি খাতুন(২৫) নামের এক প্রসূতি। পরদিন ২৮ জুন বিকাল সাড়ে ৫টায় ডাঃ হালিমা খানম তার সিজার অপারেশন করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরদিন ২৯জুন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে লাকির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হেলথ কেয়ার হাসপাতাল কর্র্র্তৃপক্ষ রোগীকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। হাসপাতালে পৌছার আগেই সন্ধা ৭টার দিকে রোগী লাকি খাতুন আ্যাম্বুলেন্সের ভিতর মারা যায়। এদিকে ভাঙ্গুরা উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদীঘি পুর্ব রামনগর গ্রামের মোঃ আব্দুল মোত্তালেবের স্ত্রী মোছাঃ আতিয়ারা খাতুন(২০) ২৭জুন সন্ধা সোয়া ৭টায় প্রসবজনীত কারনে ভর্তি হন। ওই দিনগত রাত (২৮জুন) আনুমানিক ২টার দিকে রোগীকে সিজার অপারেশন করে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অপারেশনের ৬ ঘন্টা পর রোগী আতিয়ারার অজ্ঞান অবস্থায় শ^াস-প্রশ^াসের সমস্যা হয় এবং হাত-পা ফুলে যায়। এসময় রোগীর স্বজনেরা কর্তব্যরত নার্সকে অবগত করলেও রোগীর স্বজনদের কথায় কর্নপাত করেননি। পরে রোগীর স্বজনদের চিৎকারে আতিয়ারার কাছে কথিত কর্তব্যরত চিকিৎসক উপস্থিত হলে ২৮ জুন সকাল সোয়া ৯টায় অক্সিজেন দিয়ে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রোগীর স্বজনেরা আতিয়ারাকে রাজশাহী ইসলামী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়৩দিন পরআতিয়ারা মারা যান। একই হাসপাতালে একই দিনে ডাঃ হালিমা খানমের করা সিজার অপরাশেনের দুটি রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ভাঙ্গুড়াসহ সারা পাবনায় আলোচিত হলেও স্থান পায়নি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। তাই তারা লোক দেখানো দুটি মৃত্যুর ঘটনায় একজনকে কমিটি করে তদন্তের নির্দেশ দেন পাবনার সিভিল সার্জন। মৃত আতিয়ারার স্বামী মোত্তালিব বলেন, ডাঃ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে তার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, আমি যা হারিয়েছি, আর যেন কারো জীবনে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে না হয়। রোগীর মৃত্যুর কারন জানতে গত বুধবার পাবনার ভাঙ্গুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাঃ হালিমা খানমের চেম্বারে গেলে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের বড় বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যাডাম ৩দিনের ছুটিতে রয়েছেন। ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড’র পরিচালক রাশিদুল ইসলাম লিটন ২জন রোগীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় স্বজনদের সাথে আলোচনা করে আমরা দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাতালে প্রেরন করি। পরে শুনেছি দুজন রোগীই মারা গেছে। কি কারনে মারা গেছে তা আমি জানি না। দুটি মৃত্যুর বিষয়ে ভঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তদন্ত মোঃ মিজানুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অভিযোগ পাইনি তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মনিসর চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষি প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আপনার কাছ থেকে ঘটনা প্রথম শুনলাম। যদি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সুযোগ থাকে তাহলে তা গ্রহন করা হবে। রোগীর স্বজনদের দাবি, তরিঘড়ি করে অপারেশন করা হয়েছে। তা ছাড়া হাসপাতালে কর্মরত নার্স বা আয়াদের পোষাক দেখে বোঝার উপায় নেই কে নার্স কে আয়া। রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও ভাঙ্গুরা হেলথ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা কোন সহযোগিতা পাননি। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলারকারনে দুটি তাজা প্রান অকালে ঝড়ে গেলো। নিস্পাপ দুটি শিশু মাতৃহারা হয়ে অনিশ্চিত জীবনের দিকেযাত্রা হলো। ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল ও ডাঃ হালিমা খানমের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন তারা। আগামীতে আর যেন কোন শিশু মাতৃহারা অথবা কোন মা সন্তানহারা না হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com