মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

জলঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বদলে দিয়েছে তাদের জীবন

রিয়াদ ইসলাম (জলঢাকা) নীলফামারী :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩

হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে জড়িয়ে আছে বন্যা ঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতভিটা বিলীন হলেও বাঙালি আবারও সেখানে নতুন স্বপ্ন,নতুন বসতি গড়ার লড়াই করেছে সব সময়। এই লড়াইয়ে অন্যান্য মাত্রা যোগ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে দেখিয়েছেন স্বপ্ন।যোগিয়েছেন সাহস মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য। ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন দেশ শোষনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।দেশ স্বাধীন করেছেন এবং পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করেন একটি লাল সবুজের পতাকা। দেশ স্বাধীন করার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার নানান কর্মসূচি হাতে নিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার মধ্যে অন্যতম নিদর্শন ছিল জনগণের জন্য টেকসই বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী প্রথম সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের উদ্বেগ নিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু সে স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপান্তরিত হতে দেয়নি। এদেশেরই কিছু স্বাধীনতা বিরোধী নরপিচাশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরেছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলাদেশ।ফলে এদেশের ছিন্নমূল মানুষের বাসস্থানের আশা পরিণত হয়েছিল দুঃস্বপ্নে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে পর বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন থেকে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেই পিতার মতোই সারা দেশ গুরে বেড়ান তিনি।১৯৯৬ সালে নিজের চোখে দেখেছেন মানুষের দুঃখ দুর্দশা। ১৯৯৬ সালের প্রথম সরকার গঠনের পর।পিতার অসমাপ্ত কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালের ১৯শে মে উপকূলীয় বাসিন্দাসহ ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের ব্যাপক এলাকা ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হয়।এ সমস্ত ক্ষতিগ্রস্থদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পুনর্বাসনের সরকারী অর্থায়নে পরম মমতায় শুরু করেন আশ্রয়ন প্রকল্প। তারই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের ন্যায় নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ও নিবির পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে মুজিব শত বর্ষের উপহারের ঘর। ঘর নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ভালো মানের ইট, বালু, সিমেন্ট, রড, টিন ও কাঠ।আর এ ব্যাপারে ছিলো উপজেলা প্রশাসন কর্মকর্তার কঠোর নজরদারি। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা প্রশাসন প্রতি নিয়ত এর খোঁজ খবর রেখেছিলেন। জলঢাকা পৌর শহর থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পিচঢালা পথ পেরোলে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড চেরেঙ্গা ডাকুর ডাঙ্গা বটতলী গ্রামে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের সারি সারি সেমি পাকা রঙিন ঘর। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সেমি পাকা এ ঘরগুলোর টিনের চালা যেন ‘লাল-সবুজের’ পতাকা। বাড়িগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে নানা ফুল-ফলের বাগান। রয়েছে নানারকম শাক-সবজির সবুজের সমারোহ। রঙিন টিনের আধাপাকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই বাবুইপাখির মতো সুখের স্বপ্ন বুনেছেন অনেক অসহায় হতদরিদ্র পরিবার। বর্তমানে হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। এখানকার অনেক ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে ডাকুর ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গতকাল দুপুরে স্বরেজমিনে এ আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের আঙিনার পাশে কেউ রোপন করেছেন পেয়ারা,কেউবা আমগাছ,কেউবা কাঁঠাল, নিমগাছ মাল্টাসহ নানা জাতের ফলের বাগান দিন দিন এ পল্লীকে সমৃদ্ধ করছে সবুজে সমারোহ ওদিক সেদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন নিজ নিজ কাজের সন্ধানে। আর নারীরা ব্যস্ত হাঁস-মুরগি আর নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগান পরিচর্যা নিয়ে।পৌরসভায় মুজিব শতবর্ষ উপরের ঘর পাওয়া মৃত জহির উদ্দিনের স্ত্রী ছকিতন(৭০) প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আগোত হামা এখানেই ছোট ভাঙ্গা ঘরে থেকে শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতাম। সরকার হামাক নতুন ঘর দিছে এখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আগের মত থাকার কষ্ট এখন আর নেই। কথা হয় সরেজমিনে কৈমারী ইউনিয়নের বালাপাড়ায়,মীরগঞ্জ ইউনিয়নের পাতাই বাড়ী ডাঙ্গায় ও শিমুলবাড়ী বান্নির ডাঙ্গার বেশ কিছু উপকার ভোগীদের সাথে তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা আমাগো মাথা গোঁজার ঠাই ও শান্তির নীড় গড়ে দিছে। মহান আল্লাহর কাছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ফরিয়াদ জানাই তাঁকে যেন একশ’ বছর সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখে। এভাবেই এই সুখের পল্লীতে সুখে আছেন পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধসহ নারী-পুরুষ। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহীত এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অসহায় ভিক্ষুকরাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই ঘর। এসব প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি ঘরে মিলেমিশে আছে। দিন যতই যাচ্ছে একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে যাচ্ছে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গৃহহীন-ভূমিহীনরা স্বপ্নের এ পাকা ঘরগুলো পেয়েছেন। এতে করে এই অসহায় মানুষগুলোর জীবনমান বদলে গেছে। এই মানুষগুলোর একসময় ছিলোনা নিজস্ব কোন স্থায়ী ঠিকানা। খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারের বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের এই ঘর অনাবিল হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে। স্বপ্নেও ভাবে নি নিজের একটি পাকা-পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাদের মনোরম পরিবেশে নিরাপদ ও মজবুত স্থায়ী ঘর পেয়ে। সরেজমিনে এসব ঘরে বাস করা মানুষদের দেখা যায়, মানবেতর জীবনমান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাবন করছেন। উপজেলায় এ পর্যন্ত ৯৪৯ টি গৃহ জমি সহ হস্তান্তর সম্পন্ন করেছে উপজেলা প্রশাসন।এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৪১টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০০টি, তৃতীয় পর্যায়ে ৩৮০টি ও চতুর্থ পর্যায়ে ১২৮টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় অগ্রধিকার পেয়েছেন বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারী ও প্রতিবন্ধী মানুষ। এখন থেকে এরা এই জমি ও বাড়ির মালিক।তাদের কবিলত দলিল ও নামজারি সহ ২ শতাংশ খাস জমি হস্তান্তর করেন সরকার। এখানে রয়েছে দুই রুম বিশিষ্ট বাড়ি, সাথে বারান্দা, রান্নাঘর, টয়লেট সহ নাগরিক নানান সুবিধা। এছাড়া এসমস্ত ঘরের আশেপাশে রয়েছে ফলজ, বনজ গাছগাছালি আলোকিত করার জন্য রয়েছে বিদ্যুৎসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির ও ব্যবস্থা। এবিষয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল ইসলাম এর সাথে তিনি বলেন, প্রধান মন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পে যে সমস্ত ঘর তৈরি করা হয়েছে। সে সকল ঘর উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা নিয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন যাচাই বাছাই করে তালিকা প্রনয়ন করা হয়েছে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর এ কর্মসূচি পৃথিবীর মধ্যে একটি বিরল মডেল।অসহায় মানুষের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া এ কর্মসূচির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আবেগ মিশে আছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com