বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন

এক দফা দাবিতে সারা দেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে পদযাত্রা পালিত

শাহ্জাহান সাজু
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩

এক দফা দাবিতে সারা দেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে পালিত হলো পদযাত্রা। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী সজিব হোসেন নিহত। এসময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ ৫০জন গুলিব্ধিসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক বিএনপির নেতাকমী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শহরের রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। বগুড়ায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের ছয় সদস্যসহ বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে পুরো শহর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বেলা এগারোটায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই অংশে ভাগ হয়ে পদযাত্রা শুরু করে।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এক দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপির পদযাত্রাটি শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে এ পদযাত্রা গাবতলী থেকে শুরু হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদর্শন করে দয়াগঞ্জ রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে পৌঁছে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে। সেখানে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে এ পদযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পদযাত্রা সমাপনী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এরআগে দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী থেকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে দিয়ে বিএনপির পদযাত্রাটি গেলে এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করতে পাল্টা পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদযাত্রাকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন। তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান। অনেক নেতাকর্মীদের পিকআপ করে সাউন্ডবক্সে দলীয় গান বাজাতে দেখা যায়। পদযাত্রার চলাকালে রাস্তার মোড়ে মোড়ে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
এ পদযাত্রার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগত নেতাকর্মীদের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম প্রমুখ পদযাত্রা মিছিল শুরুর সময় সম্মুখ সারিতে ছিলেন।
গাবতলী থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি শুরু হওয়া পদযাত্রায় মগবাজারে যুক্ত হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এরআগে গাবতলী ম টেকনিক্যাল মোড় মিরপুর (১)ম মিরপুর (১০) গোল চত্বর ম কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া ম তালতলা (আগারগাঁও) ম বিজয় স্মরণী ম কারওয়ান বাজার ম এফডিসি ম মগবাজার পর্যন্ত যায় এবং সেখানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি যুক্ত হয়ে মালিবাগ কাকরাইলমনয়াপল্টন(পার্টি অফিস)ম ফকিরাপুল মতিঝিল (শাপলা চত্বর)ম ইত্তেফাক মোড় ম দয়াগঞ্জ ম রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ করে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এক দফা দাবিতে দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে গতকাল বিএনপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। এছাড়া ঢাকা মহানগরে আজ এ কর্মসূচি পালন করবে। উল্লেখ্য, গত বুধবার (১২ জুলাই) ঢাকায় এক দফা ঘোষণার থেকে সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক দফা দাবিতে দু’দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র বগুড়া: বগুড়ায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের ছয় সদস্যসহ বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে পুরো শহর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বেলা এগারোটায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই অংশে ভাগ হয়ে পদযাত্রা শুরু করে। শহরের উত্তরপ্রান্ত মাটিডালি এলাকা থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে এক অংশ অপর অংশ দক্ষিণ বনানী এলাকা থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরে প্রবেশ করে। পদযাত্রা যখন শহরের ইয়াকুবিয়া মোড়ে আসে তখন পুলিশ তাদের মূল শহর সাতমাথায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এতে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড ছুড়তে থাকে পুলিশের দিকে। পরে পুলিশ কিছুটা পিছু হটলে পদযাত্রাটি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে নেতাকর্মীরা ইট ছুড়তে থাকে পুলিশের দিকে।
পরে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গুলি ছোড়া শুরু করে। তখন নেতাকর্মীরা পিছু হটে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি, টিয়ার শেল ছুড়েছে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ বলেন, পুলিশ কোন ধরনের উস্কানি বা বাঁধা দেয়নি বিএনপির পদযাত্রায়। কিন্তু হঠাৎ তাদের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর আক্রম করে। এতে পুলিশের ছয় সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। পুলিশ আকাশের দিকে গুলি ছুড়েছে। এজন্য তাদের কেউ আহত হয়নি।
কিশোরগঞ্জে যুবদলের সম্পাদকসহ গুলিবিদ্ধ ১০: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমনসহ ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও দুই সাংবাদিকসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা। পরে দুপুর ১২টায় গুরুদয়াল কলেজ মাঠ থেকে জেলা বিএনপির ব্যানারে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা বের হয়। শহরের আখড়া বাজার হয়ে ঈশা খাঁ রোডের রথখলা এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বিএনপির পদযাত্রায় বাধা দিলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
আধা ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম ও চ্যানেল২৪ এর জেলা প্রতিনিধি খাইরুল আলম ফয়সাল আহত হন। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন জানান, তিনিসহ প্রায় ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের পল্লী উন্নয়ন সমবায় সম্পাদক মাহামুদুল হাসান হিমেল, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাক আহমেদ শাহীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী মোস্তফা তাজবির, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জমান পার্নেল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আল মোর্তুজা আল কামাল মোস্তাক, পল্লী ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার মুসা তান্না, জেলা যুবদলের সদস্য সবুজ ভূইয়া, নিকলী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, পাকুন্দিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জজ মিয়া রয়েছেন।
এছাড়াও জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন, অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শহিদুল হক শহীদ, যুবদল নেতা নাঈম মিয়া, আল আমিন আহত হয়েছেন। তারা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী সার্জন (ইর্মাজেন্সি মেডিকেল অফিসার) ডা. আনন্দ বসাক বলেন, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ছয়জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম নিশাদ বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি আমাদের ছাত্রদলের ৬৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাছাড়াও আমরা ধারণা করছি আহতের সংখ্যা ১০০ জনের মতো হবে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বাপ্পি, বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইফতেকার হায়দার ইফতি, মিঠামইন উপজেলা ছাত্রদল নেতা তরিক মোমেন, সদর থানা ছাত্রদলের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক রাফিউল ইসলাম নওসাদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাজারুল ইসলাম উজ্জ্বল ও জেলা ছাত্রদল নেতা হৃদয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com